Headlines
Loading...
বর্ধমানের টেকনিক্যাল কলেজে ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা, ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ অধ্যক্ষকে

বর্ধমানের টেকনিক্যাল কলেজে ছাত্রের আত্মহত্যার চেষ্টা, ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ অধ্যক্ষকে



ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ লাগাতার মানষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অবশেষে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিল বর্ধমানের এমবিসি ইনষ্টিটিউটের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রাধারাণী ওয়ার্ডে। আশঙ্কাজনক ওই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রথম বর্ষের ছাত্রের নাম কৌস্তভ তোস। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দারপুর থানার রাজনগর এলাকায়। 



ওই ছাত্রের মা স্বর্ণলতা তোস জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে তাঁকে পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয় তাঁর ছেলে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি। এই খবর পেয়েই তিনি ছুটে আসেন বর্ধমানে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর ছেলের ওপর লাগাতার মানষিক নির্যাতন চালিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অসিত কুমার মান্না। এমনকি বৃহস্পতিবার তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে চিঠি ধরানো হয়েছে। এর আগেও তাঁকে হোষ্টেল থেকে বার করে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। লাগাতার এই মানষিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই মেধাবী কৌস্তভ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। স্বর্ণলতাদেবী জানিয়েছেন, এই ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আবেদন জানাবেন তিনি। এব্যাপারে তিনি বর্ধমান থানায় অভিযোগও দায়ের করছেন। 

অন্যদিকে, শুক্রবার সকালে এই ঘটনার পরই ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন ছাত্রছাত্রীরা। এদিন কৌস্তভের বন্ধু শিবরাম মিত্র জানিয়েছে্ন, কৌস্তভ একজন প্রতিবাদী ছাত্র। সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষ কলেজের একটি অনুষ্ঠানের জন্য ৫টি গাছ কাটার কথা বলে ১০টি গাছ কাটেন। আর সে ব্যাপারে সরাসরি কৌস্তভ অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে কেন সবুজ ধ্বংস হয়েছে তা জানতে চায়। এরপরই অধ্যক্ষ তার ওপর প্রতিশোধ প্রবণ হয়ে ওঠেন। শিবরাম মিত্র আরও জানিয়েছেন, কলেজের নানাবিধ অনৈতিক কাজের বিষয়েও সমান প্রতিবাদ করেছে কৌস্তভ। তার জেরেই তাকে নানাভাবে মানষিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। এদিকে, এই ঘটনায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বর্ধমান শহর সভাপতি পিকু ক্ষেত্রপাল জানিয়েছেন, একজন কলেজ অধ্যক্ষ তার সন্তানতুল্য ছাত্রকে যে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে - তা ভাবাই যায়না। এব্যাপারে ওই কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। 



একইসঙ্গে পিকু ক্ষেত্রপাল সহ কলেজের অপরাপর ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন,শুক্রবার সকালে এই ঘটনার পরই কলেজ অধ্যক্ষ ড. অসিত মান্না বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রদের সবকিছু মিটিয়ে নেবার কথা বলেন। আর তারপরেই ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন ছাত্রছাত্রীরা। অধ্যক্ষকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাবার কথা বলেন ছাত্রছাত্রীরা। এরইপাশাপাশি প্রতিবাদে কলেজেরগেটে তালা ঝুলিয়ে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা। যদিও এব্যাপারে অসিতবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন কৌস্তভকে হোষ্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে কি কারণে তা করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি। জানিয়েছেন, এটা হোষ্টেল সুপার সহ সামগ্রিকভাবে পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্ত। 

অপরদিকে, এদিন সকালে এই ঘটনার খবর পেয়েই রাজ্যের কারিগরী দপ্তরের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু রাজ্যের টেকনিক্যাল কাউন্সিলের ডিরেক্টর শৈবাল মুখোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী প্রতিনিধি তপন রায় চৌধুরীকে বর্ধমানের এই টেকনিক্যাল কলেজে পাঠান। এদিন তাঁরা কলেজের অধ্যাপক, কলেজ অধ্যক্ষ, হোষ্টেল সুপার এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। ছাত্রছাত্রীরা এদিন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। এরপরেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ অধ্যক্ষ অসিত মান্নাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অস্থায়ী অধ্যক্ষ হিসাবে কলেজের অধ্যাপক উৎপল  সামুইকে দায়িত্বভার দেওয়া হয়। পাশাপাশি অসিত মান্নার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অসিতবাবুকে কলেজে ঢুকতে নিষেধ করা হয়।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});