Headlines
Loading...
সরকারি বঞ্চনা ও জেলা প্রশাসনের উদাসীনতার মধ্য দিয়ে নীরবে পার এবারও পুরুলিয়ার জন্মদিন

সরকারি বঞ্চনা ও জেলা প্রশাসনের উদাসীনতার মধ্য দিয়ে নীরবে পার এবারও পুরুলিয়ার জন্মদিন



শান্তনু দাস,পুরুলিয়াঃ দেখতে দেখতে ৬৩ তম বছরে পা দিল সাবেক মানভূম। ১৯৫৬ সালের আজকের দিনে পশ্চিম প্রান্তে গড়া পুরুলিয়া নামের নতুন একটি জেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। ভাষা সেনাদের প্রবল আন্দোলনে বিহার রাজ্যের অন্তর্গত মানভূম জেলা ভেঙে জন্ম হয় পুরুলিয়ার।যদিও মানভূমের বাকি অংশ,অর্থাত্‍ ধানবাদ ও সিংভূম থেকে যায় বিহারেই ৷ তবু পয়লা নভেম্বর বাঙালির বিজয় দিবস ৷ তবে এমন দিন উদযাপনে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আশ্চর্য ভাবে উদাসীন জেলা প্রশাসন। সরকারি ভাবেও আয়োজন করা হল না কোন অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো এ বারও লোকসেবক সঙ্ঘ শ্রদ্ধার সহিত দিনটি পালন করল। একাধিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করল পুরুলিয়ার মানবাজার প্রেস ক্লাবও।



জানা যায়, ১৯২১ সালে গান্ধীজির মতাদর্শে অবিভক্ত মানভূম জেলায় গড়ে ওঠে শিল্পাশ্রম নামে স্বদেশী ভাবনার একটি কেন্দ্র ৷ কেন্দ্রটির সমস্ত সদস্যদের আশা ছিল, দেশ স্বাধীন হলে বাংলাভাষী মানভূম জেলা বাংলার অর্ন্তভুক্ত হবে ৷ কিন্তু স্বাধীনতার পরও মানভূম বিহারে থেকে যাওয়ায় জেলার কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে দলের বিরোধ ঘটে ৷ ১৯৪৮ সালে মানভূমের অর্ন্তভুক্তির দাবিতে জেলার অধিকাংশ কংগ্রেস কর্মী কংগ্রেস ছেড়ে এই লোক সেবক সংঘ গঠন করেন ৷

অপরদিকে, ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুরুলিয়ার জন্ম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তি হয় ৷ কিন্তু সাবেক মানভূমের একটা বড় অংশ সেই সময় বিহারে থেকে যায় ৷ যা বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের অধীনে ৷ ফলে বোকারো, চাষ, চন্দনকেয়ারি, পূর্ব সিংভূমের পটমদা, চাণ্ডিল, ইচাগড়ের বাঙালিদের ১ নভেম্বর এলেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় ৷ বাংলায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার যন্ত্রণা তাঁদের কুরে কুরে খায় ৷ তাই সাবেক মানভূমের ঝাড়খণ্ডের বাঙালিরা বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হতে স্লোগান তোলেন। - “শুন বিহারী ভাই,তোরা রাখতে নারবি ভাঙ দেখাই,তোরা আপন তরে ভেদ বাড়ালি,বাংলা ভাষায় দিলি ছাই৷"

এই ১ নভেম্বর এলেই সাবেক মানভূম তথা পুরুলিয়া লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মানুষজন তাদের ক্ষোভ,আক্ষেপ উগরে দেয়। সাবেক মানভূমে সেনানীদের আরও উজ্জীবিত করতে এই টুসু গান বাঁধেন লোকসেবক সংঘের সদস্য তথা প্রয়াত সাংসদ ভজহরি মাহাতো ৷ এই টুসু গানই ছিল ভাষা আন্দোলনের হাতিয়ার ৷ গানের সুরে-সুরে ভাষা আন্দোলন পুরুলিয়ার মানুষজন তাঁদের মাতৃভাষার অধিকার পান ৷ তার পরই ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল পুঞ্চার পাকবিড়রা গ্রাম থেকে ১০২৫ জন ভাষা সেনানী কলকাতা অভিযান করেন ৷ তাঁদের দাবি ছিল সাবেক মানভূমের সমগ্র অংশকে বাংলার অন্তর্ভুক্তি ৷ সেই দাবিতে কলকাতার ধর্মতলায় আইন অমান্য হয় ৷ পুরুলিয়ার মা হিসাবে পরিচিত লাবণ্যপ্রভা দেবী ও তাঁর স্বামী তথা লোকসেবক সংঘের তৎকালীন সভাপতি অতুলচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে এই পদযাত্রা হয় ৷ এই পদযাত্রার পরে ৯ মে আইন অমান্য করে ৯৬৫ জন কারাবরণ করেন। তারপরেই জন্ম হয় এই জেলার ৷ পুরুলিয়ার বঙ্গভুক্তি হয় ৷ সরকার বা প্রশাসনের তরফে এই জন্মদিন পালন না হলেও আজ পুরুলিয়া শহরের ঋষি নিবারণ চন্দ্র মূর্তির পাদদেশে লোকসেবক সংঘ ৬২ তম বঙ্গভুক্তি দিবস উদযাপন করল ৷

যদিও পুরুলিয়া জেলাবাসী তাদের ক্ষোভ উগরে বলেন, "১ নভেম্বর যে পুরুলিয়ার জন্মদিন সেটাই অনেকে আজ ভুলে মেরে দিয়েছেন। একটা জেলার জন্মদিন পালনের সাথে সেই জেলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক বিন্যাস ইতিহাসে জড়িয়ে থাকে। জেলার জন্মদিনকে ভুলে যাওয়ার অর্থ সংস্কৃতির শিকড় উপড়ে যাওয়া। এই জেলার অনেকে নিজেদের ইতিহাস, সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।" তবে প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শুরু করে জেলার নেতা-মন্ত্রীরা সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রতি বছর জেলার জন্মদিন পালনের প্রতিশ্রুতি দেন। এবং অতীব দক্ষতার সঙ্গে তা তারা ভুলেও যান। এ বারও ঠিক তাই হল !
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});