ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, বর্ধমানঃ পূর্ব বর্ধমান জেলায় গলসী, ভাতার,আউশগ্রাম সহ দক্ষিণ দামোদরের বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের জমিতে সেচের জলের তীব্র সংকট মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার বর্ধমানে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে নতুন করে শুক্রবার থেকে তিনদিন জল দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। একইসঙ্গে যাতে বিভিন্ন জায়গায় জল আটকে দেবার মত পরিস্থিতি না তৈরি হয়, সেজন্য জেলার সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওদের স্বশরীরে হাজির থেকে জলের তদারকি করার নির্দেশ দেওয়া হল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যেই সেচের জলের দাবীতে জায়গায় জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চাষীরা। এদিন যখন বর্ধমানে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, সেই সময় জলের দাবিতে রায়না থানার শ্যামসুন্দরে চাষিরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল। পরে বর্ধমানের বৈঠক সেরে প্রতিনিধি দল খন্ডোঘোষের গোপালবেরা, কেন্দুয়া, উচালন প্রভৃতি অঞ্চলে চাষিদের সাথে কথা বলেন। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, সেচ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল দাস , এগ্রি ইরিগেসনের আধিকারিক তাপস পাত্র, সহ একাধিক কৃষি, বিদ্যুৎ, জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দপ্তরের একাধিক অফিসার।
এদিকে বৃহস্পতিবার ছুটির দিনেই পরিস্থিতির মোকাবিলায় বর্ধমানের বিডিএ হলে আয়োজিত এই বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া,সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব সহ জেলার সমস্ত বিধায়ক,সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক, বিদ্যুত দপ্তরের আধিকারিক, বিডিও এবং জনপ্রতিনিধিরাও।
এদিন বৈঠকে রীতিমত বিদ্যুত দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। তিনি জানান, গত ১০ অক্টোবর সেচের জল সরবরাহ সংক্রান্ত বৈঠকে যে সমস্ত চাষীদের বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকার জন্য সাবমার্শিবলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল তা পুনসংযোগের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তা পালন করা হয়নি। এদিন উপস্থিত বিদ্যুত দপ্তরের প্রতিনিধিদের কাছে কেন বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়নি সে ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করেন সুনীলবাবু। যদিও বিদ্যুত দপ্তরের রিজিওনাল ম্যানেজার দিলীপ কুমার বাছাড় জানিয়েছেন, কেবলমাত্র পুর্ব বর্ধমান জেলায় ১২০ কোটি টাকা বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে। জেলার মোট ৭০টি সাবমার্শিবলের বিদ্যুত বিল দীর্ঘদিন বকেয়া পড়ে থাকার জন্যই সেগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও সহজ শর্তে লিখিতভাবে চাষীদের আবেদন মেনে ইতিমধ্যেই ভাতার, আউশগ্রাম, রায়না এবং খণ্ডঘোষে ৭০টি সাবমার্শিবলেরই সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
এবছর বৃষ্টির পরিমাণ অত্যাধিক কম হওয়ায় এবং দামোদর এবং তেনুঘাট জলাধারে পর্যাপ্ত জল না থাকায় বৃহস্পতিবার এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শুক্রবার থেকে তিনদিন জল দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, দামোদর এবং তেনুঘাট জলাধারে পর্যাপ্ত জল নেই। দামোদরে যে জল রয়েছে আমন চাষের জন্য তা থেকে মাত্র ৪০ হাজার একর ফিট জল দেওয়া সম্ভব। এমনকি ২০১৫ সালে একইরকম সংকটে তেনুঘাট থেকে রাজ্য সরকার জল কিনে তা সরবরাহ করলেও এবারে তেনুঘাটেও বিক্রিযোগ্য জল না থাকায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে। আর তাই এদিনের বৈঠকে স্থানীয়ভাবে যে সমস্ত জলাশয়, পুকুর, নদী, নালা রয়েছে সেগুলি থেকে জল সরবরাহ করার ওপর জোড় দেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি রাইসমিলগুলিকেও তাদের পাম্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জল সরবরাহ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলায় চলতি বছরে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর জমিই দামোদরের ক্যানেল নির্ভর চাষের সঙ্গে যুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবার থেকে যে সামান্য পরিমাণ জল ছাড়া হবে তা আদৌ শেষ পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা কিংবা তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে রীতিমত সংশয় তৈরী হয়েছে। অন্যদিকে, চাহিদামত জল না পেলে এবছর শস্যগোলা বর্ধমানে আমন চাষে ভয়াবহ ক্ষতির আশংকাও করছেন চাষীরা।