Headlines
Loading...
বর্ধমানে কলেজের অধ্যাপককে বেধড়ক মার ছাত্রদের, আহত অধ্যাপক ফিরে গেলেন উত্তরবঙ্গে, তীব্র চাঞ্চল্য

বর্ধমানে কলেজের অধ্যাপককে বেধড়ক মার ছাত্রদের, আহত অধ্যাপক ফিরে গেলেন উত্তরবঙ্গে, তীব্র চাঞ্চল্য




ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমানঃ এবার কলেজের মধ্যেই ছাত্রদের হাতে প্রহৃত হলেন অধ্যাপক। আর এই ঘটনার পর ভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ না জানিয়েই ফিরে গেলেন নিজের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার শ্যামসুন্দর কলেজে। গুরুতর আহত ওই অধ্যাপক বর্তমানে উত্তরবঙ্গের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত অধ্যাপকের নাম মিলনচন্দ্র রায়। 

জানা গেছে, কলেজের কোয়ার্টারে থাকা নিয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে বচসার মাঝে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা বেধড়ক পেটালো কলেজের এক অধ্যাপককে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাপান উতোর শুরু হয়েছে। একদিকে যখন বারবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের কলেজে দাদাগিরি নিয়ে সরব হয়েছেন। একাধিক নির্দেশিকাও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের লাগাতার অবনতি হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন অভিভাবক মহলও। 

পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার শ্যামসুন্দর কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মিলনচন্দ্র রায়।২০১০ সালের এপ্রিল মাস থেকে তিনি এই কলেজে শিক্ষকতা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই তিনি কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করতেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর ঘরের ঠিক ওপরে দোতলার ঘরটি ফাঁকা থাকায় সেটিও তাঁকে ব্যবহার করতে দেবার জন্য আবেদন জানান। একইসঙ্গে তিনি জানান, তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে সেখানে থাকবেন। মিলনবাবুর দাবী, তিনি আবেদন জানানোর পর অধ্যক্ষ গোরীশংকর বন্দোপাধ্যায় তাঁকে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিলেও কয়েকদিন পরই তিনি তাঁকে জানান, ওই ঘর তাঁকে দেওয়া যাবে না।

মিলনবাবু জানিয়েছেন, এরপরই ওই দোতলার ঘরে এসে ওঠেন পরিবেশ বিজ্ঞানের একজন অতিথি অধ্যাপক। মিলনবাবু জানিয়েছেন, ওই অধ্যাপক আসার পর থেকেই অশান্তি শুরু হয়। তিনি ওপরতলা থেকে এমনভাবে জল ফেলেন সেই জল তাঁর ঘরে এসে পড়ে। মিলনবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপার ওই অধ্যাপককে বারবার জানালেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি জানান, গত ২৬ আগষ্ট রবিবার তাঁর সঙ্গে ওই অধ্যাপকের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সেই সময় ওই অধ্যাপক তাঁকে চড় মারবেন বলে হুমকি দেন। মিলনবাবু জানিয়েছেন, এই ঘটনার দুদিন পর কলেজে গেলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজন নেতা তাঁর কাছে আসেন। এবং টিচার্স রুমের মধ্যেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁর দুই কানে মারা হয়। মারা হয় মাথায়,পেটেও। সংজ্ঞাহীন হয়ে যান তিনি। এরপর ওই ছাত্ররা হুমকি দিয়ে যায়, ওপরতলার ঘর নেবার আশা ছাড়তে । 

মিলনবাবু জানিয়েছেন, আকস্মিক এই ঘটনায় তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। ছাত্রদের কাছ থেকে এই ব্যবহার তিনি আশা করেননি কখনও। তিনি সমস্ত ঘটনা লিখিত ভাবে কলেজের অধ্যক্ষ গোরীশংকর বন্দোপাধ্যায়কে জানান। এরপরই তিনি তাঁর বাড়ি উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে ফিরে আসেন। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করা হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষাও। পরীক্ষায় ধরা পড়েছে তাঁর পেটে এলোপাথাড়ি মারায় আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসক তাঁকে বিশ্রামের নির্দেশ দিয়েছেন। মিলনবাবু জানিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় তিনি পুলিশের কাছে ভয়ে কোনো অভিযোগ করতে পারেননি। তবে তিনি জানিয়েছে্ন, যেহেতু তিনি গোটা বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষকে জানিয়েছেন তাই এব্যাপারে এফআইআর করার দায় কলেজের অধ্যক্ষের। এরই পাশাপাশি তিনি জানি্য়েছেন, তিনি সুস্থ হয়ে কলেজে ফিরবেন। কিন্তু যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তাতে কিভাবে তিনি থাকবেন বুঝতে পারছেন না। 

অন্যদিকে, এই ঘটনার কথা শিকার করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ গৌরীশংকর বন্দোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কলেজ পরিচালন সমিতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মঙ্গলবার ওই কমিটির বৈঠকও হয়। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বহিরাগত এবং প্রাক্তন ছাত্রদের কলেজে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কেউই কলেজে ঢুকতে পারবে না। এব্যাপারে কলেজের সর্বত্র নোটিশ জারী করা হচ্ছে। এরই পাশাপাশি মিলনবাবুর ওপর কারা হামলা করল সেব্যাপারে অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও মিলনবাবুর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ কলেজ কর্তৃপক্ষ বহন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। 

উল্লেখ‌্য, মিলনবাবু সেদিনের ঘটনায় যুক্ত কয়েকজন ছাত্র নেতার নাম নির্দিষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন অধ্যক্ষের কাছে। মূলত তাঁরাই এই হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, মিলনবাবু যাঁদের নামে অভিযোগ করেছেন সেটি ঠিক নাও হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত মিলনবাবু কিছু গুলিয়ে ফেলছেন। এব্যাপারে সি সি টিভি ফুটেজ দেখা হবে।অপরদিকে,কলেজের এক অধ্যাপককে এভাবে মারধোর করার ঘটনা সম্পর্কে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শ্যামসুন্দর কলেজে। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চাওয়া হয়েছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});