Headlines
Loading...
সমাজ বদলের লক্ষ্যে প্রায় দু'দশক ধরে সমাজসেবায় মগ্ন বোলপুরের ড.দেবপ্রসন্ন চৌধুরী

সমাজ বদলের লক্ষ্যে প্রায় দু'দশক ধরে সমাজসেবায় মগ্ন বোলপুরের ড.দেবপ্রসন্ন চৌধুরী


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ নিজস্ব ভাবধারায় সমাজ পরিবর্তনই তাঁর লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য পুরনে নিজের রোজগারের প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে দিয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পরা দুস্থ,গরিব মানুষদের স্বাস্থ্য পরিষেবায় কিম্বা ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করে তুলতে। প্রচারের ফ্ল্যাশ লাইট থেকে দূরে থেকেও প্রবাসী বীরভূমের বোলপুরের বাসিন্দা ড. দেবপ্রসন্ন চৌধুরী মাটির টানে নীরবে এই কাজ করে চলেছেন প্রায় ১৮ বছর ধরে।

বোলপুরেই তিনি তৈরী করেছেন একটি আউটডোর হাসপাতাল।নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই প্রাক্তন ছাত্র তাঁর প্রয়াত বাবা কালীকা প্রসন্ন চৌধুরীর নামে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালিয়ে আসছেন। যেখানে নিখরচায় সমস্ত ধরণের চিকিৎসা এবং ওষুধ দেবার ব্যবস্থা রয়েছে। দুঃস্থ ও গরীব মানুষদের স্বার্থে ২০০০ সাল থেকে চালু হওয়া এই আউটডোর হাসপাতালে ইতিমধ্যেই চিকিৎসা করানো রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। রয়েছে দুটি জরুরী বেডের ইনডোর ব্যবস্থাও। এছাড়াও রয়েছে প্যাথলজিক্যাল ল্যাব। সব ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে চিকিৎসা করানো এবং বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া ব্যাবস্থা। রয়েছে পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের ব‌্যবস্থা। রয়েছে মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণও। সমস্ত ক্ষেত্রেই নিজ খরচায় এই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। 

শুক্রবার বর্ধমানের কয়েকজন সমাজসেবীর উদ্যোগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এবার বর্ধমান জেলার একেবারে দরিদ্র, আর্থিকভাবে দুঃস্থ মানুষকে চিকিৎসা, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ করে দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেলেন প্রবাসী বাঙালী সমাজসেবী দেবপ্রসন্নবাবু।


শুক্রবার বর্ধমানে দেবপ্রসন্নবাবু জানিয়ে গেলেন, কেবলমাত্র বোলপুর নয়, বা বীরভূমও নয়। তিনি চান, গরীব, দুঃস্থ মানুষ যাঁরা অর্থাভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না, পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁদের জন্যই এই সেবা কেন্দ্র করা হয়েছে। এদিন বর্ধমান জেলার মানুষকেও এই সুযোগ নেবার আবেদন জানিয়ে যান। তিনি জানিয়েছেন, বিদেশেও তিনি বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করছেন। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য দেশের মানুষদের জন্য কিছু করার। আর এই কাজ তিনি করতে চান একেবারেই নিজস্বভাবে। অন্য কারো সাহায্য না নিয়েই। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর অনেক ছাত্রছাত্রী এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের নিজের গ্রামেও কাজ শুরু করেছে। তারাও লেখাপড়া শেখাচ্ছেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করছেন, এলাকা পরিষ্কার করার কাজ করছেন। তিনি জানান, ইদানিং কয়েকটি পঞ্চায়েতে কাজ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন, প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। অনেকেই জানতে চান তাঁর এই টাকার উৎস কি?

উল্লেখ্য, দেবপ্রসন্ন বাবু সংযুক্ত আরব আমিরশাহির একটি নামজাদা তেল সংস্থার উঁচু পদে কর্মরত। তেল সংস্থায় চাকরির পাশাপাশি সে দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আংশিক সময়ে এমবিএ ও চার্টার্ড আকাউন্টেন্সি বিষয়ে শিক্ষাকতাও করেন তিনি। তাঁর স্ত্রীও সে দেশের হাসপাতালে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। স্বাভাবিকভাবেই রোজগার প্রচুর। কিন্তু রোজগারের টাকা দিয়ে সমাজসেবামূলক কাজকর্ম করার, তাও আবার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে - এমন মানসিকতার মানুষ দুর্লভ।

একদিন-দুদিন নয় টানা ১৮ টা বছর তিলতিল করে কোন সমালোচনা ছারাই মানুষের সেবা করে চলেছেন এই মানুষটি। ইতিমধ্যেই দেবপ্রসন্নবাবুর এই কাজের প্রতি সম্মান জানাতে বোলপুর পুরসভা তাঁর জীবিত অবস্থায় বোলপুরের ওই রাস্তার নামকরণও করেছে তাঁর নামে।

বর্ধমানে যাঁদের ইচ্ছায় দেবপ্রসন্ন বাবু এসেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম কুমার ইন্দ্র রাজ এবং দেবব্রত দে জানালেন, ওনার সমাজসেবামূলক কাজকর্ম, আদর্শকে এই জেলাতেও তথা শহরের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});