ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,আউশগ্রাম: সম্পত্তি হরফের উদ্দ্যেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত নিজের ভাইকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করলো অন্য দুই ভাইকে। শনিবার ভোর রাতের এই নারকীয় ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম থানার গুসকরায়। মৃতের নাম শিবু মূর্মূ (৩০)। বাড়ি আউশগ্রাম থানার গুসকরা পুরসভার ৩নং ওয়ার্ডের ধাড়াপাড়ার পালডাঙা এলাকায়। এদিকে, এই ঘটনার পরই বাকি অভিযুক্তরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
মৃতের স্ত্রীর শেফালী মূর্মুর অভিযোগ, তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সম্পত্তি দখল নেবার চেষ্টায় তাঁকে ডাইনী আখ্যা দিয়ে আক্রমণ চালায় তাঁর স্বামীর দুই ভাই,মোড়ল সহ মোট ৯জনের দল। তিনি জানান,শুক্রবার রাত্রি প্রায় ৩টে নাগাদ আচমকাই শিবু জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে থাকেন। এই সময়ই দুই দেওর সফর ও হোপনা, গ্রামের মোড়ল সহ প্রায় ৯জনের একটি দল তাদের ঘর থেকে বার করে বেধড়ক মারতে থাকেন। প্রাণের ভয়ে একমাত্র পুত্রসন্তানকে নিয়ে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে ছুটে পালাতে থাকেন। ছুটে পালাতে গিয়েই রাস্তায় পড়ে যান শিবু। সেই সময় লাঠি, রড, চপার দিয়ে তাকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে খুন করা হয়। কোনোরকমে তিনি তাঁর পুত্র সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে আউশগ্রাম থানার পুলিশ এসে রাস্তা থেকে শিবুর দেহ তুলে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় পুলিশ মৃতের দুই ভাই হোপনা মূর্মূ এবং সফর মূর্মূকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।
মৃতের স্ত্রী শেফালী মূর্মূ জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর স্বামী শিবু মূর্মূ মানষিক রোগে আক্রান্ত। এজন্য তার চিকিৎসাও চলছে। কিন্তু তাঁর দুই দেওর হোপনা মূর্মূ এবং সফর মূর্মূ চিকিৎসা না করিয়ে ওঝা দিয়ে শিবুর রোগ সারানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন। সম্প্রতি জোর করে একজন ওঝাকে ডেকে শেফালী মূর্মূর কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা নিয়ে শিবুর ওপর ঝাড়ফুঁকও করা হয়। ওই ওঝার পরামর্শেই বাড়ির উঠানে থাকা তুলসী তলায় শিবুকে প্রতিদিন পুজোও করতে বলা হয়। কিন্তু তাতেও সুস্থ না হওয়ায় ফের অন্য ওঝা ডাকার নিদান দেন গ্রামের মোড়ল। শেফালীদেবী জানিয়েছেন, শিবু মূর্মূ প্রায়ই আপনমনেই বিড়বিড় করতেন, আবার কখনও চিৎকার করে ভুল বকতেন। দেওরদের বিশ্বাস ছিল, শেফালী ডাইনী। তার জন্যই তাদের পরিবারের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকি তারা শিবু সহ তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান এবং শেফালীদেবীকেও খুন করার হুমকি দিচ্ছিলেন।
আউশগ্রাম থানার আইসি সুজিত পতি জানিয়েছেন, ঘটনায় জড়িত থাকায় সফর মূর্মূ এবং হোপনা মূর্মূকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক বাকিদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।
গুসকরা পুরসভার পুরপতি বুর্ধেন্দু রায় জানিয়েছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আউশগ্রামের বিডিও চিত্তজিত বসু জানিয়েছেন, ঘটনার কথা তিনি শুনে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, কুসংস্কার আর পুরনো ধ্যান ধারণা দূর করতে জেলার সমস্ত মোড়লদেরই এব্যাপারে সচেতন হবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরেও কিভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে।
গুসকরা পুরসভার পুরপতি বুর্ধেন্দু রায় জানিয়েছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আউশগ্রামের বিডিও চিত্তজিত বসু জানিয়েছেন, ঘটনার কথা তিনি শুনে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, কুসংস্কার আর পুরনো ধ্যান ধারণা দূর করতে জেলার সমস্ত মোড়লদেরই এব্যাপারে সচেতন হবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরেও কিভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, এখনও সভ্য সমাজে এই ধরণের ঘটনা ঘটছে এটা আমাদের লজ্জার বিষয়। বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে এ ধরণের অন্ধ কুসংস্কারকে দূর করতে প্রশাসনকে আরো সজাগ ও সচেতন হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু কোথাও প্রশাসনিক গাফিলতির জন্যই বারবার এই ধরণের ঘটনা সমাজে ঘটছে।
ছবি - আব্বাস ও সুরজ প্রসাদ