Headlines
Loading...
 প্রতিবন্ধী দিবসে বর্ধমানে একজন প্রতিবন্ধী পেলেন চাকরীর প্রতিশ্রুতি,আরেকজনের কপালে শুধুই হতাশা।

প্রতিবন্ধী দিবসে বর্ধমানে একজন প্রতিবন্ধী পেলেন চাকরীর প্রতিশ্রুতি,আরেকজনের কপালে শুধুই হতাশা।


                                          সুনীল মন্ডল                                                                           জিতেন্দ্র মিস্ত্রি
                                                             

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান:বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে দুই ভিন্ন চিত্র দেখা গেলো বর্ধমানে। মন্ত্রীর নজরে পড়ায় একজন প্রতিদ্বন্দ্বী কার্যত হাতে পেলেন চাঁদ অর্থাৎ সরকারী চাকরীর প্রতিশ্রুতি। তাও আগামী এক মাসের মধ্যেই অস্থায়ী হিসাবে। আর একজন মন্ত্রীর নজরে না আসায় খালি হাতেই হতাশা নিয়ে ফিরলেন বাড়ি।
রবিবার বর্ধমান টাউন হলে 'ফিটন্যাষ্টিক জিম' সংস্থার উদ্যোগে এবং বর্ধমান জেলা বডি বিল্ডিং এণ্ড ফিটনেস এ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় আয়োজিত প্রতিযোগিতায় এসে সরকারী চাকুরীর প্রতিশ্রুতি পেলেন বর্ধমান শহরের প্রতিবন্ধী যুবক বডি বিল্ডার স্বপন মণ্ডল। অন্যদিকে, ৯০ শতাংশ মূক ও বধির অপর প্রতিযোগী মেমারির জিতেন্দ্র মিস্ত্রি কেবলমাত্র প্রতিযোগিতায় অংশ না নেওয়ায় পেলেন না কিছুই।
রবিবার বর্ধমান টাউন হলে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে পুরুষ ও মহিলা সহ প্রায় ২০০ প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধক রাজ্যের প্রাণী সম্পদ ও বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ফুটবল বা ক্রিকেটে ভাল খেলার পর বাইরে থেকে দমদম বিমানবন্দরে ফিরলে লোক উপচে পড়ে সম্বর্ধনা দেবার জন্য। কিন্তু রাস্তা দিয়ে একজন মিষ্টার ইণ্ডিয়া পুরষ্কার প্রাপক হেঁটে গেলে কেউ ঘুরে তাকায় না। অথচ আমরা প্রতিমুহূর্তেই বলে চলেছি ভাল স্বাস্থ্যের কথা। স্বাস্থ্যই আমাদের সম্পদ। আর সেই সুস্থ স্বাস্থ্য চর্চার অভ্যাস জারি রাখার জন্য এদিন মঞ্চে উপস্থিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টারকে উদ্যোক্তাদের ১ লক্ষ টাকা সাহায্য দেবার আবেদন জানান স্বপনবাবু।
এদিন এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন বর্ধমান শহরের গুডসেড রোডের বাসিন্দা প্রায় ৩৫ বছরের যুবক স্বপন মণ্ডল। জন্ম থেকেই তাঁর দুটি পা-ই অচল। সেই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাঁর প্রবল ইচ্ছায় শুরু করেন বডি বিল্ডিং। মাধ্যমিক অনুত্তীর্ণ স্বপন মণ্ডল বর্তমানে ট্রাইসাইকেলে লটারীর টিকিট ফেরী করেন। ২০১০ সালে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ স্থানও অধিকার করেন তিনি। তারও আগে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতায় তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। কিন্তু তীব্র অভাব এবং দুই ছেলেকে নিয়ে সংসারের জোয়াল টানতে গিয়ে তিনি বাড়ে বাড়েই চরম অভাবের সম্মুখীন হয়েছেন। আগের বাম সরকারের আমলে বারবার নানাভাবে নানা জায়গায় সাহায্যের আবেদনও করেছেন। কিন্তু শূন্য হাতেই  ফিরতে হয়েছে তাঁকে। বছর খানেক আগে স্বপন মণ্ডলের কথা জানতে পেরে বর্ধমান পুরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সেলিম খান তাকে একটি ট্রাই সাইকেল দেন। সম্প্রতি সেই ট্রাই সাইকেলও খারাপ হয়ে পড়ায় তা মেরামত করার মত সামর্থ্য নেই তার। কয়েকদিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আর্থিক সাহায্য করেন বিডিবিবি এণ্ড এফএ-র জেলা সম্পাদক সুনীল কুমার সাউ। এদিন সুনীলবাবু স্বপন মণ্ডলের বিষয়ে মঞ্চে ঘোষণা করেন। আর তারপরেই তাঁর এই অবস্থা দেখে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ আগামী একমাসের মধ্যে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরে অস্থায়ী পদে একটি চাকরী দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। 
মন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশি স্বপন মণ্ডল জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধী হিসাবে এখনও পর্যন্ত তিনি কোনো সরকারী সাহায্যই পাননি। মন্ত্রীমশাইয়ের এই ঘোষণায় বোধহয় এবার দুঃখের দিন শেষ হতে চলেছে। 

অপরদিকে, এদিন এই অনুষ্ঠানে আসেন মেমারীর বাসিন্দা বডি বিল্ডার জিতেন্দ্র মিস্ত্রী। ৯০ শতাংশ বোবা কালা। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার পর আর্থিক কারণে তিনি পড়া ছেড়ে দিয়ে বাবার সঙ্গে
কামারশালায় কাজে যোগ দেন। জিতেন্দ্রর প্রশিক্ষক অদ্বৈত পাখিরা জানিয়েছেন, জিতেন্দ্র ৯০ শতাংশ মূক ও বধির প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত শরীর চর্চায় তার আগ্রহ দেখে তিনিই যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন। ইতিমধ্যেই সে রাজ্যস্তরের মূক ও বধির দেহ সৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় ৭৫ কেজি
গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জনও করেছে। দিল্লীতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় মূক ও বধির গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে। কিন্তু এখনও সে কোনো সরকারী সাহায্যই পায়নি।

উল্লেখ্য, এদিন প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রণবানন্দ আশ্রমের স্বামী মাধবানন্দ মহারাজ, কাউন্সিলার শিখা সেনগুপ্ত, ৩বারের মিষ্টার ইণ্ডিয়া খেতাব জয়ী এবং রাজ্য যোগা
নেচারাপ্যাথির সভাপতি তুষারকান্তি শীল, মিষ্টার ইণ্ডিয়া খেতাবজয়ী দামোদর চ্যাটার্জ্জী, রাজ্য বডি বিল্ডিং এণ্ড ফিজিক এণ্ড স্পোর্টস এ্যাসোসিয়েশন নির্মল কুমার সাহা, বিধায়ক নার্গিস বেগম, আয়োজক সংস্থার কর্ণধার শম্ভু দত্ত প্রমুখরা। 
                                                                                                             ছবি - সুরজ প্রসাদ 
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});