Headlines
Loading...
রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা রাজ্যপালের, সিণ্ডিকেট রাজের তথ্য খুব শীঘ্রই জনসমক্ষে প্রকাশ হতে চলেছে

রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা রাজ্যপালের, সিণ্ডিকেট রাজের তথ্য খুব শীঘ্রই জনসমক্ষে প্রকাশ হতে চলেছে


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁকে সরিয়ে দেবার দাবী জানালেও তৃণমূল কংগ্রেসের এই দাবীকে কোনো গুরুত্বই দিলেন না বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সোমবার বর্ধমানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানিয়ে দিলেন, তিনি সংবিধান মেনে তাঁর কাজ করে যাবেন। কার্যত এদিন ম্যারাথন সাংবাদিক বৈঠকে (১ ঘণ্টা ৫০ সেকেণ্ড) রাজ্যপাল শুরু থেকেই লাগাতার সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন রাজ্য সরকারকে। সরাসরি তিনি জানিয়েছেন, এই রাজ্যে সরকারী কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে কাজ করছেন। গোটা রাজ্য জুড়ে চলছে সিণ্ডিকেট রাজ। সরকারী কর্মী, পুলিশ থেকে রাজনৈতিক নেতারা কোটি কোটি টাকার কারবার করছে। যে টাকা সরকারী রাজস্বখাতে জমা পড়ার কথা তা না করে সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে? প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল। 

একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এটা বেশিদিন চলবে না। খুব শীঘ্রই এই সিণ্ডিকেটের টাকা কোথায় যাচ্ছে তা বাংলার মানুষের কাছে প্রকাশিত হতে চলেছে বলে জানিয়ে দিলেন জগদীপ ধনকড়। রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্যাড পার্টি চলছে। কয়লা, পাথর, বালিতে চলছে কোটি কোটি টাকার কারবার। সমান্তরাল প্রশাসন চলছে। সরকারী গাড়ি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে। গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্রের শেষ পেরেক এই সিণ্ডিকেট রাজ। রাজ্যপাল বলেন, তিনি সংবিধানের মধ্যে থেকে রাজ্যে চলা এই ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরবেন না? জানতে চাইবেন না? প্রশাসনের এই ভ্রষ্টাচার কেন? 


তিনি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সিণ্ডিকেট রাজ আর প্যাড পার্টির এই কারবার নিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন, অল ইণ্ডিয়া কনফেডারেশন অফ গুডস ভেহিকেলস ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন, ফেডারেশন অব ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে দুটি চিঠিই তুলে ধরে রাজ্যপাল বলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। জানতে চেয়েছেন। কিন্তু কোনো উত্তর পাননি। শুধু রাজ্য সরকার পরিচালনা নিয়েই নয় এদিন গোটা রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংবাদ মাধ্যমকেও নিরপেক্ষ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সংবাদ মাধ্যম যখন ভয় পায় তখন তিনিও চিন্তিত হয়ে পড়েন। 

সম্প্রতি তৃণমূল নেতাদের বহিরাগত তকমা নিয়েও এদিন খোঁচা দিয়েছেন জগদীপ ধনকড়। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বে বাংলার নাম উজ্জ্বল। বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদের মত মনীষীদের ইতিহাস, তাঁদের বাণী ভুলে ভারতবর্ষের মানুষকেই বহিরাগত বলা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের। আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতির বিষয়েও এদিন সরব হয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, এর বিচার হওয়া উচিত ছিল। কেন দোতলা বাড়ির মালিক ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন, আবার সেই টাকা ফেরতও হয়ে গেল? এর বিচার হবে না? প্রশ্ন তুলে তিনি জানিয়েছেন এখনও তিনি কোনো উত্তর পাননি। সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়েও বিস্তর দুর্নীতি হচ্ছে বলে তিনি এদিন জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি সবথেকে দুঃখ পান যখন এই বিষয়গুলি নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করেন তখন তিনি তাতে পর্দা ফেলে দেন। তিনি কি অপরাধকে আড়াল করছেন? ক্যাগ তদন্ত করেছে। কিন্তু তিনি আজও এই তদন্তের রিপোর্ট পাননি। 


কেন্দ্র সরকার কৃষকদের জন্য বছরে যে ৬ হাজার টাকা দিচ্ছে, তা অন্য রাজ্য পেলেও বাংলার কৃষকদের পেটে লাথি মেরেছে এখানকার সরকার। রাজ্যপাল বলেন, তিনি বিধানসভায় জানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কেন বাংলার কৃষকদের এই টাকা থেকে বঞ্চিত করছেন। রাজ্যপাল এদিন বলেন, বাংলার এই ছবিটাই বদলানো দরকার। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এদিন মালদায় গুলি চালানোর ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যই এখন ভয়াবহ, বিপদজনক জায়গায় রয়েছে। তিনি ডিজিপির কাছে জানতে চেয়েছিলেন , উত্তর পাননি। তিনি বলেন, প্রশাসনকে রাজনীতি মুক্ত হতে হবে তবেই এই রাজনৈতিক সংঘর্ষ কমবে। রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার যে ক্লাবকে অনুদান দিচ্ছেন সেই ক্লাবঘরের ছাদ বোমা ফেটে উড়ে যাচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও এদিন সরব হয়ে তিনি জানিয়েছেন, কত পরামর্শদাতা, কত স্টাফ রয়েছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব পুলিশের, সিকিউরিটি এ্যাডভাইজারের – যা রাজ্যপালেরও নেই। পুলিশের দায়িত্ব কি? তাঁদের কাছেও জানতে চেয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে। আজও উত্তর পাননি। রাজ্যের অপহরণ, ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত ভয়ংকর বলেও এদিন দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেন তিনি। 
রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি গোটা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও এদিন চিন্তা ব্যক্ত করে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যের দুটি উপাচার্য ছাড়া বাকি সব উপাচার্যরাই রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে পরিচালিত। প্রোটোকল না মানা নিয়েও এদিন জগদীপ ধনখড় জানিয়েছেন, তিনি ফের ডায়মণ্ডহারবার যাবেন। ডায়মণ্ডহারবার কারও জায়গীরদার নয়, সেটা এই রাজ্যেরই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রোটোকল না মানা নিয়ে তিনি এদিন বলেন, ওঁদের ওপর চাপ রয়েছে। সেটা তিনি বোঝেন। কিন্তু তিনি থামবার পাত্র নন। এরও উপযুক্ত ব্যবস্থা তিনি করবেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});