Headlines
Loading...
জেলা সভাপতির অপসারণের দাবিতে বর্ধমানে বিজেপির সদর কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, আগুন, রণক্ষেত্র

জেলা সভাপতির অপসারণের দাবিতে বর্ধমানে বিজেপির সদর কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, আগুন, রণক্ষেত্র


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বিধানসভা ভোটের আগেই রীতিমত গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে মুখ পুড়ল পূর্ব বর্ধমান জেলা সদর বিজেপি নেতৃত্বের। কয়েকদিন আগেই বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জগতপ্রসাদ নাড্ডা আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ধমান শহরের ঘোড়দৌড় চটি মোড়ের যে বিজেপির সদর কার্যালয়ের উদ্বোধন করে যান সেই কার্যালয়েই প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে ব্যাপক ভাঙচুর চালালো বিজেপিরই ওপর বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠী। দুপুর প্রায় আড়াইটে থেকে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা ঘোড়দৌড় চটি সংলগ্ন এলাকা সহ জিটি রোড। খোদ কেন্দ্রীয় নেতা তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার বিজেপির পর্যবেক্ষক সাওয়ার ধননিয়ারের উপস্থিতিতেই রক্ত ঝরল বিজেপির অফিস চত্বরে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অসংখ্যা বিজেপি নেতা-কর্মী। এমনকি খোদ সদর কার্যালয়ের ভিতরেও বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। রীতিমত বিজেপি অফিসের বাইরে থেকে শতাধিক বিজেপি কর্মী হাতে পতাকা নিয়ে ঝাঁ চকচকে বিজেপির কর্পোরেট ধাঁচের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর 
চালিয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে অফিসের সমস্ত জানলার কাঁচ। তিনটি বাইক। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৩টি ছোট হাতির গাড়িতে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ৭জনকে আটক করেছে বিজেপির অফিস চত্বর থেকে।


 জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির পুরনো যে সমস্ত কর্মী তাঁরা দলে কোনো গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না বলে জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে বৃহস্পতিবার আউশগ্রাম, শক্তিগর এবং গলসী অঞ্চল থেকে কয়েকশো বিজেপি নেতা -কর্মী পার্টি অফিসে আসেন। অফিসের ভেতরে বৈঠকে ডাকা হয় দেবজ্যোতি সিংহ রায়, পুষ্পজিত সাঁই, রবীন্দ্র গর্গ, লক্ষিকান্ত দাস সহ আরও কয়েকজনকে। এদিন আউশগ্রামের ৫৩ নং জেডপির নেতা নিশিকান্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, বৈঠকে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হতেই বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর লোকজন তাঁদের মারধর করতে শুরু করেন। এমনকি তাঁদের একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এদিন মারধর করা হয় বিজেপি নেতাদের। নিশিকান্তবাবু জানিয়েছেন, কেন ওই সমস্ত নেতা সন্দীপ নন্দীদের বিরুদ্ধে রাজ্যের কাছে নালিশ জানাচ্ছেন তার কৈফিয়ত দাবী করা হয়। আর তারপরেই তাঁদের ওপর চড়াও হন সন্দীপ নন্দীর অনুগতরা। 


রীতিমত রড, লাঠি, বাঁশ দিয়ে তাদের মারধর করা হয়। যদিও পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে এই বৈঠক চলাকালীন বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী সহ কয়েকজন নেতাকেও মারধর ও হেনস্থা করা হয়। ফলে বিজেপির অফিসের ভেতরেই শুরু হয় ব্যাপক গোলমাল। অভিযোগ এই সময় বিজেপি অফিসের ছাদ থেকে নিচে ইট ছোড়া হয়। এদিকে, যখন ওই সমস্ত নেতাদের ডেকে অফিসের ভেতর বৈঠকে তাদের মারধর করা হয় সেই খবর পার্টি অফিসের বাইরে আসতেই মূহুর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিজেপি অফিস চত্বর। বাইরে থেকে ব্যাপক হারে ইঁট, পাথর ছোঁড়া শুরু হয়। অফিসের সামনের অংশের প্রায় সমস্ত কাঁচই ভেঙে দেওয়া হয়। এই সময় পাল্টা বিজেপি অফিসের তিনতলার ছাদ থেকেও ইঁট, পাটকেল ছোঁড়া শুরু হয়। 


উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরের জনবহুল জিটিরোডের পাশেই অবস্থিত এই বিজেপির সদর কার্যালয়। দুপক্ষের এই ইঁট বৃষ্টির ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এরই মাঝে পার্টি অফিসের সামনে থাকা ৩টি ছোট হাতি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এদিন নিশিকান্ত মণ্ডল অভিযোগ করেছেন, ওই গাড়িগুলিতেই এদিন তাঁরা পার্টি অফিসে আসেন আলোচনা করতে। রীতিমত পরিকল্পনা করেই সন্দীপ নন্দীর লোকজন ওই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, অবিলম্বে সন্দীপ নন্দীকে অপসারণ করা না হলে জেলা বিজেপি বাঁচবে না। তিনি জানিয়েছেন, গোটা জেলায় ২৫০০ বুথ রয়েছে। কিন্তু এখনও ১ হাজারের বেশি বুথে বুথ কমিটিই তৈরী করতে পারেনি জেলা নেতারা। এদিন সেই বিষয় নিয়েও তাঁদের আলোচনায় ডাকা হয়। এদিকে, রণক্ষেত্রের এই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হয় বর্ধমান থানার বিশাল পুলিশ ও রেফ বাহিনী। রীতিমত লাঠিচার্জ করে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এই সময়ই পুলিশ এদিন নিশিকান্ত মণ্ডল সহ প্রথমে ৪জনকে এবং পরে আরো ৩জনকে আটক করে।


 এই হামলার ঘটনা সম্পর্কে বিজেপির সহ সভাপতি প্রবাল রায় জানিয়েছেন, তৃণমূল এবং পিকের টীম টাকা দিয়ে এই হামলা করিয়েছেন বিজেপির ঝাণ্ডা ধরিয়ে। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির কর্মীদের কাছে এই অফিস একটা মন্দিরের মত। তাই যাঁরা এদিন হামলা করেছে তাঁরা কেউই বিজেপির লোক নয়। তারা তৃণমূলের লোক। বিজেপির উত্থানকে ভয় পেয়েই এই কাজ করেছে। এদিকে সন্ধ্যার পর জেলা বিজেপি পার্টি আসেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই ঘটনা তৃণমূলের ষড়যন্ত্রের ফল। তৃণমূল এই বিজেপির সঙ্গে এঁটে উঠতে নাপেরে টাকা দিয়ে লোক এনে সরাসরি বিজেপি পার্টি অফিসে হামলা চালাচ্ছে। আমরা গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। 
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});