ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: কেন্দ্রের কৃষি আইনকে বাতিলই করতে হবে, ঠাণ্ডা ঘরে পাঠালে হবে না। এই আইন বাতিল করা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবেই। ইতিমধ্যেই দিল্লীর সীমানায় আন্দোলনকারী ৫টি গোষ্ঠীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে। রাজ্য জমিয়তে উলেমায়ে এ হিন্দের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল দিল্লীতে যাচ্ছে। তিনি নিজেও যাচ্ছেন। বুধবার গলসীর পারাজ এলাকায় ২নং জাতীয় সড়কে পূর্ব বর্ধমান জমিয়তে উলেমায়ে এ হিন্দের ২নং জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালনে এসে একথা বলেন রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ীই বুধবার সকাল সাড়ে নটা থেকেই ২নং জাতীয় সড়কে বসে পড়েন সমর্থকরা। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ২নং জাতীয় সড়ক। দুপাশেই দীর্ঘ কয়েক কিমি পর্যন্ত দাঁড়িয়ে পড়ে সমস্ত গাড়ি। এই সময় কলকাতা থেকে দুর্গাপুর হয়ে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কোভিড ভ্যাকসিন। অবরোধের জেরে আটকে পড়ে এই জরুরী পরিষেবার গাড়িও। যদিও অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে গলসী থানার পুলিশ ওই গাড়িটিকে গলিগ্রাম থেকে ঘুরপথে পারাজ মোড় হয়ে গাড়িটিকে পার করে দেয় দুর্গাপুরের দিকে। যদিও এব্যাপারে খোদ মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, কোভিড ভ্যাকসিনের যে গাড়ি আটকে পড়েছে তা তিনি জানতেন না। জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভ্যাকসিনের গাড়ি যাবার রাস্তা করে দেন। কিন্তু ততক্ষণে গাড়িটিকে অন্যপথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ওই ভ্যাকসিনের গাড়ি ১৫মিনিট দেরীতে পৌঁছালে তেমন কোনো ক্ষতি হত না। তার থেকেও বেশি ক্ষতি হচ্ছে কেন্দ্রের এই কৃষি আইন নিয়ে। যেখানে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বিপদের মুখে রয়েছেন। এদিকে, এদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই রাস্তা অবরোধে সমর্থকরা সামিল হওয়ায় একটা সময় চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়। পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খোদ মন্ত্রীকেই লাঠি হাতে রাস্তায় নামতে হয়। এমনকি তিনি একটি গাড়ির ওপর উঠে সমর্থকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এব্যাপারে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, এদিন এই অবরোধ কর্মসূচীতে কেবলমাত্র জমিয়তে উলেমায়ে এ হিন্দের সমর্থকরাই ছিলেন এমনটা নয়। অনেকে বাইরে থেকে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিরও চেষ্টা করে। তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে লাঠি হাতে রাস্তায় নামতে হয়।
অপরদিকে, কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্ট যে ৫ সদস্যের কমিটি তৈরী করেছেন তা নিয়েও এদিন সরব হয়েছেন সিদ্দিকুল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, ওই কমিটির ৪জন সদস্যই বিজেপির সমর্থক। তাঁরা কৃষি আইন ভাল তো বলবেনই। এরপরই সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জবাই যারা করেছেন তাদের হাতেই আবার ছুরি তুলে দেওয়া হয়েছে। এর কোনো মানে হয়না । তিনি জানিয়েছেন, কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে গোটা রাজ্য জুড়েই আন্দোলন আরও তীব্রতর করবেন তিনি। কেন্দ্রের কৃষি আইন বাতিল না করা পর্যন্ত চলবেই এই আন্দোলন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বর্ধমান টাউন হলে জমিয়তে উলেমায়ে এ হিন্দের সভা থেকেই সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী এদিনের এই কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে এই অবরোধ কর্মসূচী। কিন্তু এদিন অবরোধ শুরু হতেই এবং অবরোধের জেরে কোভিড ভ্যাকসিনের গাড়ি আটকে পড়ার পরই খোদ নবান্ন থেকে এই অবরোধ তুলে নেবার নির্দেশ দেওয়া হয় সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, এদিন নবান্ন থেকে ছাড়াও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে ফোন করেছিলেন। তাই এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ এই অবরোধ কর্মসূচী তুলে নেওয়া হয়।