Headlines
Loading...
বর্ধমানে বিজেপির জেলা অফিসের নামকরণ বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নামে, সমালোচনার ঝড়

বর্ধমানে বিজেপির জেলা অফিসের নামকরণ বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নামে, সমালোচনার ঝড়


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা পার্টি অফিসের নামকরণ করাকে কেন্দ্র করে শহর তথা রাজ্য ও দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করেছে। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি পার্টি অফিসের নামকরণ করা হয়েছে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নামে। পার্টি অফিসের বাইরে বিল্ডিংয়ের একদম উপরে বাঁদিকে লেখা হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ডানদিকে লেখা হয়েছে বর্ধমান জেলা কার্যালয়। আর ঠিক তার নিচে লেখা হয়েছে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ভবন। আর এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গেছে চর্চা।


কিভাবে বিজেপির মত একটি রাজনৈতিক দলের দলীয় অফিসের নাম বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নামে হতে পারে তা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে শিক্ষাদীক্ষার অভাবের মত অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। এব্যাপারে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্তা জানিয়েছেন, নামকরণ নিয়ে সমালোচনা করা ঠিক নয়। তিনি জানিয়েছেন, মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসু বর্ধমানেরই সন্তান। বর্ধমানের রায়না থানার সুবলদহ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই নামকরণ করা হয়েছে। 


অন্যদিকে, সুবলদহের রাসবিহারী স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক সেখ আহমেদ আলি ওরফে বুলু জানিয়েছেন, এটা বিজেপির অজ্ঞানতা এবং মুর্খামির পরিচায়ক। এটা শুধু অনুচিতই নয়, এর মাধ্যমে বিপ্লবী রাসবিহারীকে সম্মান জানানোর চেয়ে অসম্মানই করা হয়েছে। তার থেকে অনেক ভাল হত বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বর্ধমানে সদ্য নির্মিত ষ্টেশন এলাকার উড়ালপুলের নামকরণ তাঁর নামে করতেন। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে একটা বাথরুমও করে দেওয়া হয়নি। মহান বিপ্লবীকে যেখানে জাপানে শ্রদ্ধার আসনে বসানো হয়েছে, সেখানে তিনি যেখানে জন্মগ্রহণ করলেন সেই জায়গাকেই অবহেলায় রেখে দেওয়া হয়েছে। 


বর্ধমানের বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ড. সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, রাসবিহারী বসুর যে জীবনী পাওয়া যায় তাতে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা সদস্য ছিলেন না। বিজেপি বা আরএসএসের মত সংগঠনের তো নয়ই। তাঁর নামে এভাবে দলীয় অফিস করা সমীচীন হয়নি। অপরদিকে, বিজেপির এই দলীয় অফিসের নাম বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নামে করার ঘটনায় রীতিমত অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সভাপতি রাজশ্রী চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, বিপ্লবী রাসবিহারী বসু যে আদর্শে বিশ্বাস করতেন এবং যাঁর প্রতিনিধিত্ব তিনি করতেন সেটা ছিল অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। রাসবিহারী বসুর সঙ্গে সাভারকারের একটা ভাল সম্পর্ক ছিল। রাসবিহারী বসু পূর্ব এশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন। 


তিনি জানিয়েছেন, জাপানে বন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে তিনি আইএনএ গঠন করে ভারতকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সশস্ত্র বিপ্লবই ছিল তাঁর হাতিয়ার। হিন্দু মহাসভার লক্ষ্য পূরণ করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। রাজশ্রীদেবী জানিয়েছেন, ১৯৮০ সালে বিজেপির জন্ম। তিনি জানিয়েছেন, রাসবিহার বসুকে বিজেপি সম্মান জানাতেই পারেন। কিন্তু একটা দলীয় অফিসের নামকরণ তাঁর নামে করে তাঁকে সংকীর্ণতায় আবদ্ধ করে তোলা হয়েছে এবং ভুলভাবে পরিবেশিত করা হচ্ছে। 

তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জন্মের আগেই রাসবিহারী বসু দেহত্যাগ করেছেন। ১৯৪৫ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি মারা যান। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি বা আরএসএসের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না তাঁর। কিভাবে ভারতকে স্বাধীন করা যায় তার জন্য আইএনএ ১,২ তৈরী করা, আজাদ হিন্দ সরকারের চীফ এডভাইসার - প্রভৃতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। রাজশ্রীদেবী জানিয়েছেন, যদি রাসবিহারী বসুকে সম্মান জানাতেই হয় তাহলে বিজেপি বর্ধমান ষ্টেশনের নাম রাসবিহারী বসুর নামে করুক – তারা তো কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে। তা না করে তাঁকে সংকীর্ণতায় বেঁধে নিজেদের দলীয় অফিসের নামকরণ করা ঠিক নয়। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});