Headlines
Loading...
বর্ধমানে গোল্ড লোন সংস্থায় ডাকাতি করে পালাবার সময় প্রকাশ্য দিবালোকে শ্যুট আউট, আতংক

বর্ধমানে গোল্ড লোন সংস্থায় ডাকাতি করে পালাবার সময় প্রকাশ্য দিবালোকে শ্যুট আউট, আতংক


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ধমান শহরের বিসি রোডে ভরাভর্তি লোকজনের মধ্যেই হিন্দি সিনেমার কায়দায় একটি বেসরকারী গোল্ড লোন সংস্থায় দুঃসাহসিক ডাকাতি করে প্রায় ৩২ কেজি সোনা নিয়ে পালালো দুষ্কৃতিরা। বাধা দিতে গিয়ে ওই সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী সহ প্রায় ৯জন কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। পাশাপাশি লুটপাট চালিয়ে পালিয়ে যাবার সময় বাধা দিতে গেলে দুস্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছেন এক ব্যক্তি।
ঘটনার ভয়াবহতায় আতংক সৃষ্টি হয়েছে শহর জুড়ে।


ওই সংস্থার কর্মী সুরজিত বৈদ্য জানিয়েছেন, এদিন প্রায় ৬ জনের একটি দল রীতিমত পরিকল্পনামাফিক একে একে গ্রাহক সেজে ভেতরে ঢোকে। প্রত্যেকের মাথায় ছিল হেলমেট। ভেতরে ঢুকেই তাঁরা নিজের নিজের পজিশন নিয়ে নেয় আম গ্রাহকের মতই। যষ্ঠতম দুষ্কৃতি ভেতরে ঢুকেই কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী তাকে বাধা দিতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীকে প্রথমে লাথি মেরে ফলে দেওয়া হয় মেঝেতে। এরপর তাকে বেধড়ক মারধর করে কপালে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে চুপ করে থাকতে বলা হয়। এই সময়ই বাকি দুষ্কৃতিরা ভেতরে ঢুকে গিয়ে অফিসের কর্মী এবং গ্রাহকদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। অফিসের ম্যানেজারের মুখে আগ্নেয়াস্ত্রের নল ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় অফিসের ৯ জন কর্মীকে। 

যদিও ইতিমধ্যে ৩বার বিপদসূচক সাইরেন বাজানো হয়। অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, এখানকার বিপদসূচক সাইরেন প্রথমবার বাজলেই তা মুম্বাইয়ের হেডঅফিস জানতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই মুম্বাই থেকে বসেই গোটা অপারেশন তাঁরা দেখতে পান। অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতিদের প্রত্যেকেরই বয়স ৩০-এর মধ্যে। তারা হিন্দি ভাষাতেই কথা বলছিল। কর্মীরা জানিয়েছেন, এদিন দুষ্কৃতিরা প্রায় ৩২ কেজি সোনা নিয়ে চম্পট দেয়। সমগ্র ঘটনা ঘটে দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে। এদিকে, এই সংস্থায় দুঃসাহসিক ডাকাতি সেরে যখন দুষ্কৃতিরা দোতলা থেকে নিচে নেমে আসতে থাকে সেই সময় ওই সংস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যাচ্ছিলেন হিরামন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি।


হিরামনের বাড়ি জামালপুর থানার জৌগ্রামের কলিপুকুর এলাকায় হলেও বর্তমানে তিনি শ্বশুরবাড়ি বর্ধমানের সরাইটিকর বাসাপাড়া এলাকায় থাকেন। এই সংস্থাতেই তিনি প্রায় ৬ বছর বেসরকারী সংস্থার অধীনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেছেন। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি নিরাপত্তারক্ষীর কাজ ছেড়ে টোটো চালাতে শুরু করেন। এই সংস্থায় তাঁর একটি লোন থাকায় তিনি এদিন প্রিমিয়াম জমা দেবার জন্য ওই সংস্থায় যাচ্ছিলেন। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়েই তিনি দুষ্কৃতিদের নামতে দেখেন আগ্নেয়াস্ত্র সমেত। এই সময় তিনি একজনকে জাপটে ধরে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গুলি চালালেও গুলি কোমড় ছুঁয়ে বেড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় গুলিটি লাগে তাঁর বুকপকেটে। কিন্তু সেখানে মোবাইল ফোন থাকায় গুলি বুকে লাগেনি। মোবাইল ফোনটি ভেঙে যায়। 

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানিয়েছেন, এরপরই দুষ্কৃতিরা ছুটে বাইরে বেড়িয়ে এসে মোটরবাইক নিয়ে পালাতে থাকেন। সেইসময় হিরামন মন্ডল মোটরবাইকে থাকা একজনকে ধরে টেনে ফেলে দেন। এই সময়ই স্থানীয় এক দোকানদার বৃদ্ধ তারক বোস তিনিও মোটরবাইকের পিছনের দুষ্কৃতিকে জাপটে ধরে হ্যাঁচটা টান মেরে রাস্তায় ফেলে দেন। আর তখনই ফের গুলি চালানোয় তিনি ভয়ে ছেড়ে দেন। এরপরই তারা পালিয়ে যায় বলে তারকবাবু জানিয়েছেন।


তিনি জানিয়েছেন, গত ৪০ বছরেও তিনি কখনও বিসিরোডে এই ধরণের ঘটনার কথা শোনেননি। হিরামনবাবু জানিয়েছেন, যখন তিনি এবং বৃদ্ধ তারকবাবু দুজনে মিলে একজনকে ধরে ফেলেন সেইসময় তার মাথায় বন্দুকের বাঁট দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয়। একইসঙ্গে তাঁকে লক্ষ্য করে ফের ২ রাউণ্ড গুলি ছোঁড়া হয়। একটি গুলি তাঁর পিঠে লাগে। এরপরই দুষ্কৃতিরা মোটরবাইকে চেপে পালিয়ে যায়। যদিও হিরামনবাবু জানিয়েছেন, দুষ্কৃতিরা মাথায় হেলমেট ও মাস্ক পড়ে থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। 

এদিকে, প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল বিসিরোডে শ্যুট আউটের ঘটনায় ব্যাপক আতংক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় সহ ডিএসপি সৌভিক পাত্র, বর্ধমান থানার আইসি পিণ্টু সাহা। বিসিরোড এলাকায় থাকায় সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ দুষ্কৃতিদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে। পুলিশ আধিকারিকরা এদিন বিসিরোডের দুপাশে বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেন। 


জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ‌্যায় জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়েই সমস্ত থানাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গোটা জেলায় সীমানায় নাকাবন্দি করা হয়েছে। তাঁরা দ্রুত অপরাধীদের ধরার চেষ্টা করছেন। সমস্ত থানার ওসিরাই দুষ্কৃতিদের সন্ধানে নিজের নিজের এলাকায় রাস্তায় নেমে পড়েছেন। পাশাপাশি লোন প্রদানকারী সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে গোটা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। 
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});