Headlines
Loading...
২২ বছর আগের স্মৃতি উসকে ফের পিটিয়ে যুবক খুন বর্ধমানে, তীব্র উত্তেজনা

২২ বছর আগের স্মৃতি উসকে ফের পিটিয়ে যুবক খুন বর্ধমানে, তীব্র উত্তেজনা


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান:  আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে কার দখলে থাকবে বর্ধমান পুরসভার ১নং ওয়ার্ড – তাকে ঘিরেই বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। গত পুর নির্বাচনের পর থেকে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছে এই এলাকা। আর বুধবার সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই গণপিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়ালো বর্ধমান শহর জুড়ে। আর এই ঘটনাই ফের মনে করিয়ে দিল ২২ বছর আগের মর্মান্তিক সেই স্মৃতি। ১৯৯৮ সালের ১২ জুলাই লক্ষ্মীপুর মাঠের কাঁটাপুকুর এলাকার বাসিন্দা নদীয়ার বড় জাগুলিয়া কলেজের অর্থনীতির প্রফেসর শরদিন্দু কোনারের খুনের ঘটনাকে। 


সেদিন ছিল বর্ধমান পুরসভার নির্বাচন। আর সিপিএম বিরোধী শরদিন্দু কোনারই ছিল এলাকায় তৎকালীন শাসকদল সিপিএমের কাছে মাথাব্যাথার অন্যতম কারণ। ফলে তাঁকে সরিয়ে দেবার চক্রান্ত তৈরী হয়েছিল বাম শিবিরে। আর তারই ফলস্বরূপ পুরনির্বাচনের দিন রাতেই শরদিন্দু কোনারকে পিটিয়ে নৃশংস্যভাবে খুন করার পর সেদিনের বামপন্থীরা রটিয়ে দিয়েছিল কয়লা পাচারকারীদের নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীবাজিতে খুন হয়েছেন শরদিন্দু কোনার। ওই দিনই রাত্রি প্রায় ১ টা ২০ নাগাদ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান শরদিন্দু কোনার। 

১৯৯৮ সালের পর ২০২০ -র বুধবার সন্ধ্যার ঘটনায় নতুন করে শিউরে উঠলেন লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকার তথা বর্ধমান পুরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দরা। অনেকেই সেদিনের সেই পুরনো স্মৃতির কথাই শুনিয়েছেন। ক্ষমতা দখল নিতে এই এলাকার খুনের ইতিহাসে আবারও একটি অধ্যায় যুক্ত হল লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায়। বুধবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর মাঠের কাঁটাপুকুর মোড়ে ফের গণপিটুনির জেরে খুন হল এক যুবক। পেশায় পেশাদার ভিডিও ফটোগ্রাফার। মৃত যুবকের নাম গৌতম দাস (২৫)। বাড়ি বর্ধমান শহরের ১নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর মাঠের বাদশাহী রোড এলাকায়। মৃত যুবক স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক হিসাবে পরিচিত। 


কি ঘটেছিল বুধবার সন্ধ্যায়? নিহত গৌতম দাসের সঙ্গী সোনু সিং জানিয়েছেন, তাঁরা একটি মোটরবাইক নিয়ে বাদশাহী রোড থেকে আসছিলেন। রাস্তায় অন্য একটি মোটরবাইকের এক আরোহী যুবক আচমকাই তাঁদের বাইকের হ্যাণ্ডেল ধরে ঠেলে দেয়। এনিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বচসা হয়। দুপক্ষই একে অপরকে দেখে নেবার হুমকি দেয়। সোনু সিং জানিয়েছেন, এরপর তিনি ও গৌতম দাস দুজনেই কাঁটাপুকুর মোড়ে চলে আসেন। সেই সময় সেখানেই প্রায় জনা পঞ্চাশ যুবক তাঁদের ওপর হামলা চালায়। যাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন রাজনারায়ণ সাউ ওরফে বাউয়া। এরপরই তাঁকে এবং গৌতম দাসকে ফেলে পেটানো হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গৌতম দাসকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


আর এরপরই গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত একদল মানুষ এলাকার তৃণমূল নেতা বিকাশ মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায়। ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় গোটা বাড়িতে। মারধর করা হয় বিকাশ মণ্ডলকে। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে বাঁচাতে এলে বিকাশবাবুর বৃদ্ধ মাকেও মারধর করা হয়। মারধর করা হয় বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও। গোটা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় ঘটনাস্থলে হাজির হন ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) শৌভিক পাত্র ও বর্ধমান থানার আইসি পিন্টু সাহা সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৩জনকে আটক করেছে।

এদিকে, আচমকাই তরতাজা ছেলেকে হারিয়ে বুধবার রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন গৌতম দাসের মা। আর বুধবার রাতে তরতাজা এক যুবককে কেবলমাত্র বাইকে ঠেকাঠেকিকে ঘিরে পিটিয়ে খুন করার এই ঘটনা কেউই মেনে নিতে চাইছেন না। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই এই ১নং ওয়ার্ডে তৃণমূল নেতা বিকাশ মণ্ডল এবং সুরেন্দর শর্মার ওরফে তেতরার মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে। ক্রমশই এগিয়ে আসছে বর্ধমান পুরসভার ভোট। এই দুই নেতাই এবার পুরভোটের টিকিটের দাবীদার। ফলে কার দখলে থাকবে এই ওয়ার্ড তা নিয়েই চলছে লড়াই। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন ময়নাতদন্তের পর গৌতম দাসের মৃতদেহ বাদশাহী রোডে নিয়ে যাওয়া হল তখন গোটা এলাকা জনসমুদ্র। আর এদিনের এই জনসমুদ্র দেখেই অনেক পুরনো বাসিন্দারা জানিয়েছেন , ১৯৯৮ সালের ১৩ জুলাই এই একই দৃশ্য ছিল। আগের দিন রাতে প্রফেসর এবং ভাতার পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ানো প্রার্থী শরদিন্দু কোনার কে খুন করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় একরোখা জেদী পরোপকারী মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। আর তাই তাঁকে সরাতেই তৈরী করা হয়েছিল ছক।


শরদিন্দু কোনারের মৃত্যুর পর তাঁর বাড়ির পাশের নির্মীয়মাণ একটি বাড়ির মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিল ৪০টি তাজা বোমা। শুধু তাই নয়, শরদিন্দু কোনারের খুনের ঘটনায় গোটা এলাকায় যে আতঙ্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল তা প্রশমিত করতে নজীরবিহীনভাবেই ১ মাস এলাকায় পুলিশ পিকেট রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ ২২ বছর পর লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় ফিরে এল আবার এক উত্তেজনার দিন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনরাত টহল দিচ্ছে পুলিশ, রাফ।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});