Headlines
Loading...
হবে তো দুর্গা পুজো! দিশেহারা বর্ধমানের পুজো উদ্যোক্তারা

হবে তো দুর্গা পুজো! দিশেহারা বর্ধমানের পুজো উদ্যোক্তারা


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গোৎসব নিয়ে এবছর রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা পুজো উদ্যোক্তাদের। করোনা ও আমফানের প্রভাব যে ব্যাপকভাবে এবছরের পুজোয় পড়তে চলেছে সে ব্যাপারে অধিকাংশ পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা এখনই একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছেন। শেষমেষ আদৌ কতটা বড় বা জাঁকজমক পূর্ণ পুজো তাঁরা করতে পারবেন তা নিয়ে এখনই কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। তবে সব বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে নমো নমো করে হলেও মা দুর্গার পুজো যে হবেই সেব্যাপারে একমত সব পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা।

  
বিশেষ করে রীতিমত সংকটজনক পরিস্থিতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন বিগ বাজেটের উদ্যোক্তারা। একদিকে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি অন্যদিকে আমফান বিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে অধিকাংশ বড় বড় ক্লাবই তাঁদের সঞ্চিত টাকা খরচ করে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল সহ ক্ষতিগ্রস্থ এবং অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফলে সঞ্চিত অর্থ নেই বললেই চলে। তার ওপর গত বছরের বিজ্ঞাপনের বকেয়া টাকা এই মার্চ মাসেই দেবার কথা ছিল বিজ্ঞাপন দাতাদের। কিন্তু যেহেতু এবারে মার্চ মাস থেকেই শুরু হয়ে গেছে করোনার প্রভাব আর টানা লকডাউন, ফলে সেই সমস্ত টাকা আদায় এখনও কার্যত দূরঅস্ত।


ক্লাব কর্তারা জানিয়েছেন, এখন কিভাবে যাবেন তাঁদের কাছে? আগে মানবিকতা, বিবেক - পরে অন্যকিছু। এখন মানুষের বাঁচা মরার লড়াই। তাই পুজো নিয়ে তাঁরা কিছুই ভেবে উঠতে পারছেন না। সবটাই আগামীদিনের ওপর নজর রেখে চলেছেন। অথচ মায়ের (দুর্গা) পূজো হবে না এবার – এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই দোলাচলের মধ্যে রয়েছেন বর্ধমানের বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা। একইসঙ্গে এবছর প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে রীতিমত প্রেস্টিজিয়াস পুরষ্কার বিশ্ববাংলা পুজো সম্মানও। কারণ অধিকাংশ বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় নামেন রাজ্য সরকারের এই পুরষ্কার জয়ের জন্য। কিন্তু এবছর করোনার থাবায় সব ধ্বসে গেছে। যেটুকু বাকি ছিল সেটুকুও আমফানের ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ফলে ভয়াবহ ধ্বংসের মুখে এবারের দুর্গাপুজো। মোট কথা একপ্রকার প্রায় দিশেহারা অবস্থা বর্ধমানের পুজো উদ্যোক্তাদের।


গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্ববাংলা পুরস্কার ছিনিয়ে নেওয়া বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জ বারোয়ারী দুর্গাপুজো কমিটির মুখপাত্র মনীশ সিংহ জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁরা নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে যে মিটিং করেছেন তাতে কার্যতই ধীরে চলার নীতি নেওয়া হয়েছে। পুজো হয়তো হবে ঠিকই। কিন্তু প্রতিবারের মত অত জাঁকজমক করে হবে না। গতবছর যেখানে তাঁদের পুজো বাজেট ছিল ৩৫ লাখ টাকার। এবারে তা নেমে আসতে পারে প্রায় অর্ধেকে। মনীশ সিংহ জানিয়েছেন, রীতি অনুযায়ী প্রতি বছরের পুজো শেষ হবার পরেই পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হয়। আগের বারও তাই হয়েছিল। বায়না করে দেওয়া হয়েছিল মণ্ডপ শিল্পী, প্রতিমা থেকে থিম মেকার কে। এখন কিভাবে কি হবে তাই নিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন সকলে। তবে তাঁরা আশাবাদী। এখনও হাতে সময় আছে। যেহেতু এবার মহালয়ার প্রায় একমাস পর পুজো। তাই মাঝের ওই একমাস সময় পেলে এবং সবকিছু সুস্থ ও স্বাভাবিক হলে তাঁরা চেষ্টা করবেন গতবারের মত না হলেও মোটামুটি একটা জায়গায় পুজোকে দাঁড় করাতে।


বর্ধমান শহরের অপর বিগ বাজেটের পুজো সবুজ সংঘের সম্পাদক বাপি বোস জানিয়েছেন, গতবছর তাঁদের বাজেট ছিল ৪৫ লাখ টাকা। এবারে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তা অর্ধেকেরও কম হবে। যদিও তাঁরা করোনা এবং আমফান পরিস্থিতিতে অকাতরে ত্রাণ বিলিয়েছেন। তাঁদের লক্ষ্য রয়েছে আমফান বিধ্বস্ত সুন্দরবন এলাকায় গিয়ে সেখানে ত্রাণ দেওয়ার। ইতিমধ্যেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা চাইছেন পুজোর বাজেট কমিয়ে আরও কিছু মানুষকে সাহায্য করার। পাশাপাশি প্রতিবারের মত এবারও তাঁরা অনলাইনে পুজোর সম্প্রচার করবেন। 

পদ্মশ্রী সংঘের সম্পাদক স্বপন দাস জানিয়েছেন, এবারের পুজো নিয়ে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। গতবার তাঁদের পুজোর বাজেট ছিল ৩৫ লক্ষ টাকা। এবারের পরিস্থিতিতে ৮০ শতাংশ বাজেট কমে যাবার সম্ভাবনা। শুধু তাইই নয়, গতবারের পাওনা কয়েক লক্ষাধিক টাকা এখনও অনাদায়ী। কারও কাছে যেতে পারছেন না। বিবেকে লাগছে। শুধু তাইই নয়, ইতিমধ্যেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল সহ বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ দিয়েছেন ক্লাবের সঞ্চিত টাকা থেকে। ফলে কিভাবে হবে পূজো? ভেবে উঠতে পারছেন না। যদিও তিনি আশাবাদী পুজো হবে ঠিকই, কিন্তু কার্যতই তা হবে নমো নমো করে।


বর্ধমান ছাড়িয়ে বড়শুলের বিগবাজেটের পুজো  জাগরণী কিংবা বাইমা-র উদ্যোক্তারাও এবার কার্যত দিশাহারা পুজো নিয়ে। বড়শুল জাগরণীর সভাপতি পিণ্টু পাল জানিয়েছেন, বিবেকের তাড়নায় তাঁরা ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে পুজো নিয়ে ভাবতে পারছেন না তাঁরা। কোথাও যেন মনে হচ্ছে এটা অমানবিক হয়ে যাচ্ছে না তো। তাই এখনও তাঁরা আলোচনায় বসতেই পারেননি। অন্যান্যবার যখন জাগরণীর মাঠে প্যাণ্ডেল তৈরীর কাজ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায় এখন সেই মাঠ খাঁ খাঁ করছে। 

বড়শুলের বাইমার উদ্যোক্তা কাজল সরকার জানিয়েছেন, এবারে তাঁদের বাজেট কমছে। গতবার ছিল ২৫ লাখ। এবারে তা কমছে। ফলে তাঁরা ছোটোর ওপর পুজো করবেন এবং একইসঙ্গে তাঁদের মূল লক্ষ্য পুজোকে সামনে রেখে অসহায় মানুষদের আরও কিভাবে সাহায্য করা যায়। বর্ধমানের কেশবগঞ্জ বারোয়ারী পুজো কমিটির সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ হাটিও জানিয়েছেন, এখনও তাঁরা পুজো নিয়ে কোনো আলোচনাই করে উঠতে পারেননি। তবে পুজো হলেও তার বাজেট হবে অনেকটাই কম। 

যদিও এরই মাঝে অন্যান্য বারের থেকেও এবার বড় পুজো করার আশা প্রকাশ করেছেন বর্ধমানের সর্বমিলন সংঘের সম্পাদক বিশ্বজিৎ মন্ডল। তিনি জানিয়েছেন, গত মার্চ মাস থেকে তাঁরা লাগাতার আর্ত, দুস্থ, অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন। ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশেও তাঁরা সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখন এটা একটা চ্যালেঞ্জ, মানুষকে আবার উৎসব মুখর করে তুলতে হবে। দুঃখ, সমস্যা কাটিয়ে আনন্দের মধ্যে ফিরতে হবে। তাই পুজো নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না। অন্যদিকে দুর্গাপুজো সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সাউ জানিয়েছেন, পুজো অবশ্যই সবাই করবেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিগত বছর গুলোর মতো হয়তো এতটা আড়ম্বর পূর্ণ হবে না। তিনি জানিয়েছেন, লকডাউন শেষ হলে সমস্ত পুজো কমিটিকে নিয়ে মিটিং ডাকা হবে। কারণ এবছর পুজো করাটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

বস্তুত, করোনা আবহের আতংক আর আমফানের ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে এবারের দুর্গাপুজোর আতিশয্যায় কোপ পড়ায় অনেকেরই অর্থনৈতিক বুনিয়াদ দুর্বল হবে বলে আশংকা করেছেন। কারণ এই পুজোকে সামনে রেখেই প্রচুর মানুষের রুটি রুজি হয়। বিভিন্ন পেশার মানুষ সারাবছর পুজো নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন। এবার তাঁদের অবস্থাও খারাপ। ফলে এতদিনে যখন খুঁটি পুজোর ধূম পড়ে যায় – করোনা আর আমফান কার্যত সেই খুঁটিই নাড়িয়ে দিয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের মন থেকে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});