Headlines
Loading...
আমফানের তাণ্ডব - পূর্ব বর্ধমানে ২৫০ কোটি টাকার ফসল নষ্টের সম্ভাবনা, ত্রাণ বিলি নেতা থেকে সমাজসেবীর

আমফানের তাণ্ডব - পূর্ব বর্ধমানে ২৫০ কোটি টাকার ফসল নষ্টের সম্ভাবনা, ত্রাণ বিলি নেতা থেকে সমাজসেবীর


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বিধ্বংসী আমফানের প্রভাবে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়ল পূর্ব বর্ধমান জেলা। বুধবার সন্ধ্যে থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ঝড় ও বৃষ্টির তাণ্ডবে জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর এলাকায় ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা বলে এদিন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন। 

এদিন তিনি জানিয়েছেন, আমফানের প্রভাবে জেলা থেকে কোনো প্রাণহানির খবর এখনও মেলেনি। পূর্বস্থলীতে এক মহিলা হুকিং করে বিদ্যুতের তার লাগাতে গিয়ে বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ মারা যান। তার সঙ্গে আমফানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমফানের প্রভাবে জেলায় ২৫৪টি কাঁচাবাড়ির পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১৫৪৬টি কাঁচা বাড়ির। গোটা জেলায় সকাল ৬ টা পর্যন্ত মোট ১৬৫টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। মেমারীর ব্রাহ্ণণপাড়া প্রাথমিক স্কুলে একটি ত্রাণ শিবির করে সেখানে বেশ কিছু পরিবারকে স্থানান্তর করা হয়েছে। 


জেলাশাসক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলায় মোট ৮জন আহত হয়েছেন। জেলায় সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে গলসী ১ ও ২, আউশগ্রাম ১ ও ২, ভাতার, মঙ্গলকোট, কালনা ১ ও ২, বর্ধমান সদর ১ ও ২, মন্তেশ্বর এলাকায়। জেলাশাসক জানিয়েছেন, জেলায় এবার মোট বোরো ধানের চাষ হয়েছিল ১ লক্ষ ৭১ হাজার হেক্টর এলাকায়। আমফান ঢোকার আগে পর্যন্ত গোটা জেলায় গড়ে মোট ৭৬.৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে রায়না ১ ও২, জামালপুর ও মেমারী প্রভৃতি এলাকায় ১০০ শতাংশ ধান কাটার কাজ হয়ে গেছে। 

তিনি জানিয়েছেন, প্রায় ৩৩হাজার হেক্টর এলাকার ফসল এখন মাঠে পড়ে রয়েছে। এর মূল কারণ দেরী করে চাষ করা এবং জমিতে জল জমে থাকায় হারভেষ্টর মেশিন নামাতে না পারা। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতির মধ্যে তিলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়াও সব্জী চাষেরও বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এখনও গোটা জেলা জুড়েই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে।


জেলাশাসক জানিয়েছেন, চাষের ক্ষতির পাশাপাশি গতকাল ঝড়ের তান্ডব শুরু হওয়ার পর থেকে গোটা জেলায় ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। বিদ্যুৎ দপ্তর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে শুত্রুবার সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতির প্রায় ৭০শতাংশ উন্নতি ঘটিয়েছে। আগামী কয়েকঘন্টার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। 

এরই মাঝে মঙ্গলবার এবং বুধবার আমফানের প্রভাবে যখন গোটা রাজ্য জুড়েই শংকার কালো মেঘ ছেয়ে গেছে, সেই সময় রীতিমত নজীর গড়ে তুললেন বর্ধমানের কানাইনাটশাল এলাকার সর্বমিলন সংঘের সদস্যরা। এলাকার প্রায় পাঁচশো পরিবারের হাতে তুলে দিলেন দুদিনের রসদ প্রয়োজনীয় কাঁচা সবজি সহ খাদ্য সামগ্রী। সংঘের সম্পাদক বিশ্বজিৎ মন্ডল জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউন চলাকালীন তাঁরা এলাকার সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে লাগাতার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। কিন্তু বিধ্বংসী আমফান ঝড়ের মধ্যে মানুষকে যাতে ঘর থেকে বার হতে না হয়, তারজন্য আগাম প্রয়োজনীয় কাঁচা সবজি ও খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।


অন্যদিকে, বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেই তিনি এলাকার বাসিন্দাদের হাতে তুলে দিলেন ত্রাণ সামগ্রী। নিশীথবাবু জানিয়েছেন, একদিকে, লকডাউনের জেরে মানুষ বিপর্যস্ত, তার ওপর প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে দেখেই আতংকে মানুষের মুখগুলো শুকিয়ে গেছিল। তাই তিনি দ্রুততার সঙ্গে বুধবার বিকালেই এই ত্রাণ তুলে দিয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যেই মাথায় ছাতা নিয়ে ত্রাণ নিতে হাজির হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। 
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});