ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনার আতংকের মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এবার বিশেষত পথ কুকুরদের মৃত্যুর মিছিল শুরু হওয়ায় চাঞ্চল্য দেখা দিল। খোদ পশু চিকিৎসকরাও এই ঘটনায় রীতিমত উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে, লক ডাউনের জেরে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহও স্বাভাবিক নয়। ফলে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যাপারে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পশু চিকিৎসকদের।
রাজ্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের বর্ধমান জেলার যুগ্ম অধিকর্তা প্রবীর পাঠক জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিশেষত পথ কুকুরদের মধ্যে পার্বো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকেও তাঁরা বিক্ষিপ্ত ভাবে রিপোর্ট পাচ্ছেন অতি সংখ্যায় পথ কুকুরদের মরে যাবার বিষয়ে। সম্প্রতি বর্ধমানের ভাতার এলাকায় বেশ কয়েকটি পথ কুকুর এবং কাকের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বীরভূমের সিউড়িতেও কিছু পথ কুকুরের মৃত্যুর খবর তাঁরা পেয়েছেন। এই জেলাতেও একাধিক
কুকুর এই সংক্রমণে মারা গেছে। ফলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পার্বো ভাইরাসের আক্রমণ এবার চিকিৎসকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
প্রবীর বাবু জানিয়েছেন, এই পার্বো ভাইরাস মূলত চলতি আবহাওয়ায় এবং শীতের শুরুর মুখে প্রভাব বিস্তার করে। এই পার্বো ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুরের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় অতিরিক্ত বমি এবং তার সঙ্গে রক্ত পায়খানা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে হয়ত অনেক ক্ষেত্রেই বাঁচানো সম্ভব হয়। তিনি জানিয়েছেন, সরকারী পশু হাসপাতালে এই ধরণের আক্রান্ত কুকুরকে নিয়ে আসছেন অনেকেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সরকারীভাবে এখনও তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত এই রোগের ইনজেকশন বা ওষুধ মজুত নেই। তবুও তাঁরা সবরকমের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে ওষুধ সরবরাহে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। লকডাউন মিটে গেলে সবটাই স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে। উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরের মধ্যে যে পশু হাসপাতাল রয়েছে সেখানে বর্তমানে একজন চিকিৎসক, একজন ফার্মাসিস্ট এবং দুজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের দিয়েই তাঁরা কাজ চালাচ্ছেন। গত ২৩ মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট ৪৫টি গরু, ১৫০টি ছাগল, ১৩০টি কুকুর এবং অন্যান্য প্রায় ২০০টি পশুর তাঁরা চিকিৎসা করেছেন। এর মধ্যে পথ কুকুর তাঁরা কিছু পেয়েছেন যারা এই পার্বো ভাইরাসে আক্রান্ত। তাদেরও চিকিৎসা চলছে।
গড়ে প্রতিদিন ৩০টির মত পশুর চিকিৎসা করানো হচ্ছে। এরই মাঝে মুরগীর ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজও চলছে। প্রবীরবাবু জানিয়েছেন, পথ কুকুরদের মধ্যে এই পার্বো ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কাছে নিয়ে এলে তাঁরা চিকিৎসা করানো বা সুস্থ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তাঁরা জানতে পারছেন অনেক পরে। তখন তাঁদের কিছু করণীয় থাকছে না।
উল্লেখ্য, চলতি লকডাউন পর্বে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্য তুলে দেবার ব্যাপক উদ্যোগ চলছে সর্বত্র। তেমনি এই পথ কুকুরদেরও খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বহু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সমাজকর্মীরাও। বর্ধমানের বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী সপ্তাহে প্রায় ৩দিন গোটা শহর ঘুরে এই পথ কুকুরদের মাংস ভাত খাওয়াচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই পশু চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যাঁরা এই পথ কুকুরদের নজরদারী করছেন তাঁরা আরও একটু ভালভাবে নজর দিন – পার্বো ভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে তাঁকে সত্বর পশু হাসপাতালে নিয়ে আসারও পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।