Headlines
Loading...
নদী বক্ষেই অস্থায়ী সেতু, দেদার চলছে বালির কারবার - প্রশাসনের নির্দেশিকাই সার

নদী বক্ষেই অস্থায়ী সেতু, দেদার চলছে বালির কারবার - প্রশাসনের নির্দেশিকাই সার


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ষবরণের রাতেই গলসির শিকারপুর এলাকায় রাস্তার ধারে বাড়ির উপর বালির গাড়ি উল্টে বালি চাপা পড়ে একই পরিবারের ৫জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। ক্ষুদ্ধ জনতার তান্ডবে একাধিক বালি খাদানের সমস্ত মেশিন পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন বালি ঘাটের ইজারাদাররা। আর এই ঘটনায় রীতিমত নড়েচড়ে উঠেছিল জেলা প্রশাসন। শিকারপুর সহ আশপাশের ৮টি বৈধ বালিঘাট কে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধও করে দেয় প্রশাসন। এখনো সেগুলো চালু হয়নি। 

এরই মধ্যে গত ৯জানুয়ারি জেলার সমস্ত বালি ঘাটের ইজারাদার দের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন জেলাশাসক, সভাধিপতি, সহ সভাধিপতি প্রমুখরা। বৈঠকে বেশ কয়েকদফা নির্দেশের পাশাপাশি প্রত্যেক বালি খাদের সামনে আবশ্যিক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা এসওপি-র বোর্ড লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। যাতে বালি তোলার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন বালি ঘাটের ইজারাদার, কর্মীরা সরকারি নিয়ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই বিষয়ে কোনো অসঙ্গতি দেখলে প্রশাসনিক পর্যায়ে জানাতে পারবেন। কোথাও বেআইনি হলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরেও আনতে পারেন তাঁরা।

কিন্তু ঘটনার দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও জেলার বিভিন্ন বালি ঘাটের অবস্থা সেই একই। বর্ধমান ১ ব্লকের বেলকাশ পঞ্চায়েতের ইদিলপুর মৌজায় দামোদরের বুকে তৈরী করা হয়েছে কাঠের সেতু। দামোদরের নদের মাঝেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য লরি, ট্রাক্টর। এমনকি নদী বক্ষ থেকেই জেসিবি দিয়ে তোলা হচ্ছে বালি। লরিতে সেই বালি লোড করে নদের বুকেই তৈরি করা অস্থায়ী সেতু দিয়ে দিব্যি পেরিয়ে যাচ্ছে সেই সব বালি ভর্তি ডাম্পার। একপ্রকার নদীর স্বাভাবিক স্রোত এবং গতিপথ আটকেই রীতিমতো চলছে এই বালির কারবার। কোথাও কোন বিধিনিষেধ নেই। নেই কোন নির্দেশিকাও। যদিও ঘাট মালিকের বক্তব্য সেচ দপ্তরের কাছে অনুমতি নিয়েই অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়েছে। 

ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদিলপুর মৌজায় বালির ইজারা রয়েছে স্বপন সরকার, মোহন চৌধুরী ওরফে বাচুয়া,  রীতেশ সাউ ও অঞ্জলি দাস এই চারজনের নামে । সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বৈঠকেও এঁনারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারপরেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। নদী থেকে বালি নিয়ে সেই নদী বাঁধই ব্যবহার হচ্ছে পরিবহনের জন্য। স্বপন সরকার বলেন, ‘আমরা সেচ দপ্তরের অনুমতি নিয়েই ব্রিজ তৈরী করেছি। আর রাস্তা না হলে কিভাবে বালিটা উঠবে। তবে দামোদরের যে অংশে রাস্তা তৈরীর কথা উঠছে, সেটা আমার ঘাট নয় ওটা মোহন চৌধুরীর ঘাট। বাকিটা তিনি বলতে পারবেন। প্রশাসনের বৈঠকে আমরা ছিলাম। আমরা সব কিছুই মেনে চলার চেষ্টা করছি।’ 

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে এই চারজন ইজারাদারের মধ্যে দু’জনের বালি ঘাটের ইজারা বাবদ সরকারি টাকাও এখন বকেয়া রয়ে গিয়েছে। যদিও বকেয়া টাকা মেটানোর জন্য প্রশাসন ১৫ দিন বাড়তি সময়সীমা দিয়েছে। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের অতিরিক্ত জেলাশাসক শশীকুমার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সরকারি নির্দেশিকা মেনেই বালি তুলতে হবে। এখানে কোন আপষ আমরা করব না।’ সেচ দপ্তরের ইদিলপুর মহকুমার এসডিও চির রঞ্জন দত্ত বলেন, ‘আমরা বর্ষার আগে নদীতে বালি তোলার জন্য অস্থায়ী ব্রিজ তৈরীর অনুমতি দিয়েছি ইদিলপুর এলাকায়। কিন্তু নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা বা রাস্তা তৈরীর অনুমতি দিইনি। আমরা তদন্ত করে দেখব।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});