latest
state
অন্য স্বাদ
জেলা
জ্ঞান বিজ্ঞান
রাজনীতি
রাজ্য
বর্ধমানে ভুতের গুজব ছড়িয়ে ইভিএমে কারচুপির চেষ্টায় শাসকদল, অভিযোগ দায়ের বিজেপি প্রার্থীর
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ সেই ১২৬ বছরের পুরনো ইতিহাস। কোনোটা ব্রিটিশ আমলের আবার কোনোটা রাজ আমলের তৈরী বাড়ি। সেই পুরনো খড়খড়ির জানালা। কোথাও আবার সেই জানালার আধখানা ঝুলছে। বাড়িগুলোর কোথাও কোথাও দেওয়াল খসে পড়ছে। কোথাও আবার জানলার কাঁচ আধখানা ঝুলছে। শুধু বাড়িই নয়, এই বাড়ি লাগোয়া এলাকা জুড়ে রয়েছে শতাধিক বছরের পুরনো একাধিক বিভিন্ন গাছ। যেখানে নিরাপদ বাসস্থান নানান বিষধর সাপ থেকে হরেকরকম পশু-পাখীরও। এককথায় দিনের আলো নিভলে এই এলাকার পরিবেশ বেশ গা ছমছমে।
এটাই বর্ধমান পুর্ব লোকসভা আসনের গণনা কেন্দ্র এমবিসি ইনষ্টিটিউট। আর এখানেই আগামী ২৩ মে ভোট গণনা। ইতিমধ্যেই আধা সামরিক বাহিনী তথা নির্বাচন কমিশনের কড়া পাহারায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে গোটা গণনা কেন্দ্র। এখানেই রয়েছে ১৯৯৯টি ইভিএম মেশিন। প্রতি মূহূর্তে চলছে কড়া নজরদারী। খোদ জেলার রিটার্নিং অফিসার তথা পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা রাউণ্ড দি ক্লক নজরদারী চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই শনিবার আরও ৭জন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আগামী ২০ মে হাজির হবেন বলে জেলা প্রশাসনের কাছে বার্তা এসে পৌঁছেছে। তাঁরা বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের গণনাকেন্দ্র ইউআইটি এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের গণনা কেন্দ্র এমবিসি ইনষ্টিটিউটে দায়িত্বে থাকবেন। ফলে চুড়ান্ত এই আঁটোসাঁটো ব্যবস্থার পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই রয়েছে ২জন করে পাহারাদারও। তাঁরাও নজর রাখছেন স্ট্রংরুমের দিকে।
এদিকে, এই অবস্থায় এমবিসি ইনষ্টিটিউটে অজানা বিভিন্নরকম আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে - এমনটা দাবী করেছেন বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের পাহারাদার বিশ্বজিত বাগ্দী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা যখন বাইরে বসে গল্প করছেন কিংবা নিজেদের একাকীত্ব কাটাতে নিজেদের মত গান করছেন সেই সময়'ঘুঙুরের' কখনও আবার 'হারমোনিয়াম, তবলা'র আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন তাঁরা। যদিও বিশ্বজিতবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে তাঁরা প্রশাসনের কাছে কিছু জানাননি। আর এই ঘটনাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাস। রবিবারই তিনি পূর্ব বর্ধমানের রির্টানিং অফিসার তথা জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে লিখিত একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন। এই অভিযোগেই তিনি জানিয়েছেন, 'তাঁরা মনে করছেন সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একটি গুজব ছড়িয়ে দিয়ে ইভিএমে কারচুপি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর তাই এই ধরণের গুজব ছড়িয়ে দিয়ে বিশেষ করে রাজ্যের শাসকদল বিরোধী এজেণ্টদের এলাকা ছাড়া করার চেষ্টা করছে।'
শুধু এটাই নয়, খোদ বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাস জানিয়েছেন,তাঁরা আশংকা করছেন ভোট গণনার সময় এবং গণনার পরবর্তী সময়ে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ২জন নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া হলেও তিনি তাঁর প্রাণহানির আশংকাও করছেন। জেলাশাসকের কাছে দেওয়া আবেদনে এই ধরণের গুজব বন্ধ করা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার আবেদন জানিয়েছেন।
যদিও বিজেপি প্রার্থীর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডলের নির্বাচনী এজেণ্ট উত্তম সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ পুরোপুরিই ভিত্তিহীন। কারণ এমবিসিতে কেবল তৃণমূল বা বিজেপির পাহারাদার নেই সেখানে অন্য দলেরও পাহারাদার রয়েছেন। উত্তমবাবু জানিয়েছেন, বিজেপি প্রার্থী আগেই বুঝে গেছেন তিনি হারছেন তাই এই সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। যদিও এমবিসিতে এই ধরণের ভুতুরে কাণ্ডকে সহাস্যে উড়িয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী সিদ্ধার্থ মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন,এটা একেবারেই ভিত্তিহীন বিষয়।
অপরদিকে, খোদ জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, স্ট্রংরুমে কড়া নজরদারীর পাশাপাশি সবরকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধরণের বিষয় কেউই তাঁকে জানায় নি। এগুলি একেবারেই ভিত্তিহীন অভিযোগ। এদিকে, এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হওয়া বিতর্কে রীতিমত জল ঢেলে দিয়েছেন বর্ধমান পুরসভার ৬নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার তথা পুরসভার জল সরবরাহের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল মহম্মদ সেলিম। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ বছর বাবার সঙ্গে তিনি ছিলেন এই এম বিসি ইনষ্টিটিউটের লাগোয়া জজ বাংলোয়। তাঁর বাবা সৈয়দ আব্দুল হালিম জজ কোর্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি অবসর নেন। ততদিন তিনি বাবার সঙ্গে ওই বাংলোতেই ছিলেন। কিন্তু কখনও তিনি এই ধরণের ভুতুরে গল্প শোনেননি। সেলিম জানিয়েছেন, বহু পুরনো আমলের বাড়ি - যার কিছু ধ্বংস হচ্ছে। এম বিসি ইনষ্টিটিউটে নতুন ভবন তৈরী হয়েছে। সেখানেই বর্তমানে ক্লাস হচ্ছে। সম্প্রতি ভোট গণনাকে ঘিরে ভুতুরে ঘুঙুর, হারমোনিয়াম বা তবলার আওয়াজ পাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে সে সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, এতকাল তিনি এই এলাকায় রয়েছেন। ওই ভবন কে কেন্দ্র করেই কার্যত বড় হয়েছেন। আজ পর্যন্ত কেউই কখনও ভুতুরে কোনো কাজের কথাই বলেননি। এটা একেবারেই আজগুবি গল্প ছাড়া কিছু নয়। তিনি জা্নিয়েছেন, যেহেতু পুরনো বাড়ি, গাছপালা আছে তাই হাওয়া দিলে সেখানে কিছু আওয়াজ হয় - এটা স্বাভাবিক। আবার কিছু জন্তু, পাখিও আছে। রাত্রে তাদের আওয়াজে গা ছমছম করাও স্বাভাবিক। কিন্তু এর সঙ্গে অশরীরী বা ভুতুরে কোনো ব্যাপার নেই।
অন্যদিকে, এব্যাপারে দি ফ্রি থিঙ্কিং হিউম্যানিষ্টস-এর জেলা সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ভুত-প্রেত গল্পতেই মানায় বাস্তবে নয়। এই ধরণের বিষয়কে সামনে আনার পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দূরভিসন্ধি কাজ করে। প্রশাসনের উচিত কড়া হাতে এগুলি দমন করা।