সান্তানু দাস,পুরুলিয়াঃ যতই দিন এগিয়ে আসছে পুজো আর শিউলি ফুলের গন্ধে মেতে উঠছে বাংলার বাতাস। আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দিনই বাকি। তাই যৎসামান্য উপার্জনের আশায় বুক বেঁধেছেন মৃৎশিল্পীরা। মাটির ঘট, প্রদীপ এবং পুজোর অন্য সামগ্রী তৈরিতে ভীষণ ব্যস্ত তাঁরা।পুরুলিয়ার ছোটো একটি গ্রামের নাম কোটলই। সেই গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই এই চেনা চিত্র বর্তমান। সারা বছর মাটির কলসি এবং মাটির দৈনন্দিন সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। তবে এই দুর্গাপুজোর মরশুমই তাঁদের বাড়তি আয়ের সময়। পুজোর সামগ্রী তৈরি করে বাড়তি অর্থ উপার্জনের আশায় এই কাজ করেন তাঁরা। কিছুদিন আগে অবধিও সারাবছর এই কাজ করে ভালোই রোজগার হত তাঁদের। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান উন্নতির জন্য বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবহার বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের ছোটো বড়ো লাইটের সম্ভারের দরুণ মাটির কলসি ও প্রদীপের চাহিদা কমেছে।
যাবতীয় প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রীর জেরে মাটির সামগ্রী তথা এককালের ঐতিহ্য ক্রমশ কদর হারাচ্ছে,এই দাবিই করছেন মৃৎশিল্পীরা। আর তার ফলে চরম অনটনে দিন কাটছে পুরুলিয়ার এই মাটির কারিগরদের। তাঁরা জানাচ্ছেন,পিতৃপুরুষদের এই ঐতিহ্য ও শিল্পতালুককে আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এই শিল্প রীতিমতো ধুঁকছে। পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা অনিশ্চয়তার জন্য এই কাজকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে না। ফলে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।
পুজোর সময় বাড়তি কিছু রোজগারের জন্য এই কাজ করলেও সারা বছর পেট চালানো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই শিল্পীদের পক্ষে। তাই প্রশাসনের তরফ থেকে অনুদান ও সহযোগীতার আশায় দিন গুণছেন তাঁরা।পুজোর সময় একদিকে যখন সারা রাজ্যবাসী মেতে উঠবে শারদোৎসবে, তখনও এই মাটির কারিগরদের ঘরে অভাবের অন্ধকার ভরে থাকবে। কারণ দিনযাপনে পেটের ভাত যোগানোই শেষ কথা। আর সেটাই এই শিল্পীদের কাছে বড়ো লড়াই। তাই পুজোর উৎসব তাঁদের কাছে নেহাতই বিলাসিতা।