ফোকাস বেঙ্গল ডেস্কঃ 'একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।' ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই গানই গেয়েছিলেন শহীদ বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। আজ ১১ অগাস্ট সেই বীরের তিরোধান দিবস। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে যাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে তাঁদের অন্যতম ক্ষুদিরাম বসু।
দেশের ৭০তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাককালে আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বীর শহীদ ক্ষুদিরামের তিরোধান দিবস পালিত হলো বর্ধমানের রাধানগর পাড়ার ঢলদীঘি মোড়ে। প্রণাম,মাল্যদান,বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব এবং এলাকার নাগরিকবৃন্দ পালন করলেন এই দিনটি। উপস্থিত ছিলেন ৩৪নং ওয়ার্ড এর কাউন্সিলার উমা সাঁই ,প্রবীণ সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন ব্যানার্জী, ক্লাব সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তী সহ বহু নাগরিক।
কে এই ক্ষুদিরাম?
আসুন আরও একবার জেনে নি ইতিহাসের কথা।
১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মেদিনীপুর জেলার মোহবনীতে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষুদিরাম বসু। তাঁর পিতার নাম ত্রৈলোক্যনাথ বসু এবং মাতার নাম ছিল লক্ষ্মীপ্রিয়া। ছয় ভাই বোনের মধ্যে ক্ষুদিরাম ছিলেন কনিষ্ঠ। অল্প বয়সে মা মারা যাওয়ার কারণে তাঁর দিদি অপরূপা দেবী ও জামাইবাবু অমৃতলাল রায়ের সংসারে বড় হয়ে ওঠেন। ক্ষুদিরাম তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে পড়াশুনা করতেন। তাঁর প্রিয় শিক্ষক ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। স্কুলে পড়াকালীন ঋষি অরবিন্দের বক্তৃতা তাঁকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। সেই সময় তমলুকের সুরেন্দ্রনাথ রক্ষিতের বাড়িতে ছিল বিপ্লবীদের আড্ডা। সেখানে ব্যায়াম চর্চার মাধ্যমে গোপনে বিপ্লবের কাজকর্ম চলতো। সেখানেই ক্ষুদিরাম মাতৃমন্ত্রে দীক্ষিত হন। এরপরই লেখাপড়া ছেড়ে বিপ্লবের পথে অগ্রসর হন।
১৯০৫ সালে বাংলা যখন বিভাজন হয়,তখন ক্ষুদিরাম বসু ভেঙে পড়েন।তাঁর মন খুবই বিচলিত হয়ে পড়ে। তখন তিনি 'যুগান্তর' দলে যোগ দেন। এই যুগান্তর সেই সময় নাশকতামূলক কাজকর্ম করতো। এর কয়েক মাস পর প্রফুল্ল চাকী এই দলে যোগ দেন। বারীন ঘোষ অর্থাৎ ঋষি অরবিন্দের ভাই ছিলেন তাঁদের গুরু।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি মোজাফ্ফরপুরের এক ধর্মশালায় উঠে সিদ্ধান্ত নেন কিংসফোর্ড যখন আদালত থেকে ফিরবেন তখন তাকে বোম মেরে ও গুলি করে হত্যা করা হবে। কাজ হাসিল করতে তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন। সেই সময় একটি ফিটন গাড়ি করে রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ কিংসফোর্ডের স্ত্রী,কন্যা এবং একজন ব্যারিস্টার আসছিলেন।ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারে এবং গুলি চালায়। ঘটস্থলেই মারা যান তিনজন।এরপর ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী জুতো খুলে পালিয়ে যান। পুলিশ সমস্ত থাকে নির্দেশ দেয় নগ্ন পদযাত্রীকে দেখলেই যেন তল্লাশি নেয়।
১মে ক্ষুদিরাম মুড়ি কিনতে বেরিয়ে সমস্তিপুরে পুলিশের হাতে ধরা পরে যান। প্রফুল্ল চাকীও একই জায়গা থেকে ধরা পরে গেলেও নিজের কাছে থাকা রিভালভার দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালিয়ে প্রাণ উৎসর্গ করেন।
১৯০৮ সালের ২১ মে থেকে ক্ষুদিরামের ট্রায়াল শুরু হয়। ১৩ জুন বিচারক উডম্যান ক্ষুদিরামকে দোষীসাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এর দু মাস পর আজকের দিনে অর্থাৎ ১১অগাস্ট ১৯০৮ সালে সকাল ৬টায় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়।
ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও নির্ভিক বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম পীতাম্বর দাসের রচিত গান ,একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি যখন গাইছেন উপস্থিত সকলে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন।
তাই আসুন আজকের দিনে আমরা সকল ভারতবাসী শপথ নি,দেশ কে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ যাঁরা বপন করেছিলেন ক্ষুদিরাম,প্রফুল্ল চাকী ,বিনয়,বাদল,দীনেশদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে যাই।




