২০১৬-র বিধানসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরে সবংয়ে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হিসেবে মানস ভুঁইয়া পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৮৭টি ভোট। জিতেছিলেন ৪৯ হাজার ১৬৭ ভোটে। মানসের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের নির্মল ঘোষ পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮২০টি ভোট। ২০১৬ সালের ভোটে বিজেপি প্রার্থী কাশীনাথ বসু পেয়েছিলেন মাত্র ৫ হাজার ৬১০টি ভোট।
তাহলে কোন জাদুবলে বিজেপির এই ফল ?
না কোনও জাদু নয়। স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা জানাচ্ছেন, তাদের নিবিড় জনসংযোগেই হয়েছে এই ভোট বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণে উঠে আসছে বেশ কিছু ব্যাখ্যা।
ভারতের মতো ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশেও ইফতার-রাজনীতি আর জাতপাতের রাজনীতি সুদীর্ঘকাল থেকেই চলছে । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বোধহয় এর থেকে এগিয়ে ছিল। মারামারি, কাটাকাটি, থেকে শুরু করে, ধর্ষণ করে খুন - কোনওটাই বাদ যায়নি। বাকি ছিল জাতপাত আর ধর্মের রাজনীতি। দক্ষিণ ভারতের লিঙ্গায়েত, ওয়াক্কালিগা বা উত্তর ভারতের মতো যাদব, বহুজন সমাজের রাজনীতি এ রাজ্যে হয়নি। তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে খুব দ্রুত একটা মেরুকরণ হচ্ছে। ধর্মীয় পরিচয় হয়তো ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে এ রাজ্যের রাজনীতিতে। সেই কারণেই হয়তো মন্ত্রীদের জনসংযোগ বাড়াতে হচ্ছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে। যাত্রা শুরু সেই ইমামভাতা দিয়ে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, কালনা, কাটোয়া, রায়গঞ্জ, ধুলাগড়, ইসলামপুরে একের পর এক ঘটনা এবং সবশেষে বসিরহাটের মতো ঘটনা- প্রশাসন নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন তুলবে,সেটাই স্বাভাবিক। তাজিয়া, দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে খোদ হাইকোর্টই প্রশ্ন তুলেছিল। রামনবমীতে অস্ত্র-মিছিল সেই রাজনীতিরই আপডেটেড ভার্সন।
তৃণমূলের তরফে যতই বলা হোক গুজরাত ভোটের এফেক্ট নেই বাংলায়, সেটা হয়তো ঠিক নয়। যাঁরা দোটানায় ছিলেন তাঁরা হয়তো গুজরাতের ফল দেখে মনস্থির করে ফেলেন কাকে ভোট দেবেন।
এবারের ভোটের প্রচারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী, প্রত্যেকে নিশানা করেছিলেন বিজেপিকে । কে না জানে নেগেটিভ প্রচারও প্রচার। তৃণমূল বারবার বিজেপির প্রসঙ্গ তুলে, তাদের আক্রমণ ও সমালোচনা করে অনেকটা প্রধান বিরোধীর স্বীকৃতি দিয়েছিল দলটিকে। অন্যদিকে মানস ভুঁইঞাকে পুরোনো তৃণমূলীদের যে অংশ আজও মেনে নিতে পারেনি। তাঁরা কি আদৌ দলের হয়েই ভোট দিয়েছেন ?
নতুন বিজেপিতে আসার পর এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন মুকুল রায়। রাজ্য রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল জানে এরাজ্যের প্রতিটি বিধানসভার ইতিহাস-ভূগোল তাঁর নখদর্পনে। তিনি তৃণমূলের অন্দরের বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে নাকি যোগাযোগ রাখছেন প্রতিনিয়ত। সেই যোগাযোগের পরিণামও ভোট বাক্সে পড়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।